সকালের নাশতায় এই ৭টি অভ্যাসে বেড়ে যায় ইনসুলিন

সকালের নাশতা আমাদের শরীরের দিনের প্রথম জ্বালানি। কিন্তু অনেক সময় আমরা এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলি, যা অজান্তেই রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বাড়তে পারে ওজন,  আসতে পারে ক্লান্তি, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। আজকের এই আলোচনায় আমরা জানবো সকালের নাশতায় করা এমন ৭টি সাধারণ অভ্যাস, যা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে—আর সেই সাথে জানবো কীভাবে এগুলো এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর দিনের শুরু করা যায়। তো চলুন শুরু করা যাক । 

চলুন জেনে নেয়া যাক সকালের নাস্তায় কোন ৭ অভ্যাস আমাদের ইনসুলিন বাড়িয়ে দেয় ।

১. নাশতা জুস বা মিষ্টি পানীয় দিয়ে শুরু করা
জুস প্রাকৃতিক হলেও এতে আঁশ বা ফাইবারের অভাব থাকায় শরীরে শর্করা দ্রুত শোষিত হয়। এর ফলে হঠাৎ ইনসুলিন বেড়ে যায় এবং শারীরিক শক্তি কমে যেতে পারে। তাই নাশতায় জুসের বদলে গোটা ফল খাওয়া এবং চিনি ছাড়া পানীয় বেছে নেওয়াই ভালো।

২. বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া
সাদা রুটি, সিরিয়াল, জ্যাম, জেলি বা চকলেট–জাতীয় খাবার, টোস্ট, ডোনাট, কেক ও পেস্ট্রিতে থাকে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট। অথচ এগুলোতে ফাইবার ও প্রোটিন খুব কম থাকে। ফলে এগুলো দ্রুত হজম হয়ে ইনসুলিন বাড়ায়। তাই গোটা শস্য ও সুষম খাবার দিয়ে দিন শুরু করলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে।

৩. অতিরিক্ত মিষ্টি স্মুদি বা আঁশহীন খাবার গ্রহণ
স্মুদিতে সাধারণত তুলনামূলকভাবে বেশি চিনি থাকে। অনেকেই ফলের রসে চিনি মেশান, আর মিষ্টি দইতে তো চিনি থাকেই। সমস্যা হলো, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশবিহীন তরলে থাকা চিনি দ্রুত শোষিত হয়। ফলে এগুলো খেলে ইনসুলিন দ্রুত বেড়ে যায়। তাই স্মুদিতে টক দই বা বাদামের মতো প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ ফল যোগ করাই ভালো।

৪. খালি পেটে চিনি মেশানো চা বা কফি পান
খালি পেটে চিনিযুক্ত চা–কফি দিয়ে দিন শুরু করলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। মনে রাখা দরকার, তরল শর্করা কঠিন খাবারের তুলনায় দ্রুত শোষিত হয়। একই সঙ্গে ক্ষুধাও বাড়ায়। তাই সকালের নাশতায় চিনি ছাড়া চা–কফি নেওয়াই স্বাস্থ্যকর।

৫. অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া
মিষ্টি দই ছাড়াও কিছু দুগ্ধজাত পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি বা বেশি ল্যাকটোজ থাকে। সমস্যা হলো, এসব চিনি দৃশ্যমান নয়—মানে আমরা যোগ করি না, আগেই মেশানো থাকে। ফলে এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই নাশতায় দই খেতে চাইলে সাধারণ টক দই খান। বিকল্প হিসেবে বাদাম, সয়াবিন, ওটস, চাল বা নারকেল থেকে তৈরি উদ্ভিজ্জ দুধ নিতে পারেন, যা ল্যাকটোজ ও কোলেস্টেরলমুক্ত।

৬. খাবারের সঠিক ক্রম না মানা
সকালে কার্বোহাইড্রেট দিয়ে নাশতা শুরু করলে শরীরে গ্লুকোজ দ্রুত প্রবেশ করে। তাই বিশেষজ্ঞরা নাশতার শুরুতে শাকসবজি বা প্রোটিন এবং শেষে কার্বোহাইড্রেট খেতে বলেন। এই ক্রম রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭. নাশতা এড়িয়ে চলা
নাশতা বাদ দিলে দিনের শেষে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়তে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় না খেলে শরীরে সঞ্চিত গ্লুকোজ নিঃসৃত হয়। এতে খাবার খাওয়ার পর ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত নাশতা করলে রক্তে শর্করা ভারসাম্যপূর্ণ থাকে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধাও কম লাগে।

দিনের শুরুটা যেমন হবে, সারাদিনের স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাবও তেমন পড়বে। সকালের নাশতায় এই ৭টি অভ্যাস হয়তো আপনাকে অজান্তেই ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সচেতন হোন, সঠিক খাবারের পছন্দ ও ক্রম মেনে চলুন, আর ইনসুলিনকে রাখুন নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্যকর নাশতার অভ্যাসই হতে পারে আপনার সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ।

নিয়মিত হাটুন সুস্থ থাকুন । তো আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।



No comments

Powered by Blogger.