৪০ বছর বয়স পার হলে এই ৫ ধরনের খাবার অবশ্যই খান

সময় কারোও জন্য থেমে থাকে না। জীবন এগিয়ে চলে জীবনের নিয়মে। কিন্তু আপনি কি জানেন—৪০ বছর বয়স পার করার পর থেকেই আমাদের শরীরে নীরবে শুরু হয় কিছু পরিবর্তন? এই বয়সে পেশি দুর্বল হতে থাকে, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, হজমশক্তি কমে যায়, এমনকি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও দিন দিন বাড়তে থাকে! কিন্তু একটু সচেতন হলেই এই পরিবর্তনগুলোকে অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতে আমরা জানবো—চল্লিশ বছর বয়স পার হলে কোন ৫ ধরনের খাবার অবশ্যই খাওয়া উচিত, আর কেনই বা সেগুলো এত দরকারি। আশা করছি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাবো । তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক ।

এই খাবার তালিকায় আমাদের প্রথম খাবার—আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এই বয়সে অনেকেই বলেন, ‘পেটটা ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না’ কিংবা ‘মলত্যাগে কষ্ট হয়।’এর প্রধান কারণ—খাবারে আঁশের ঘাটতি। আঁশ এমন এক উপাদান যা হজমতন্ত্রকে সচল রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

 আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে অন্যতম ওটস বা দইয়ের সঙ্গে মেশানো ফ্ল্যাক্স সিড, ব্রাউন রাইস, মুসুর ডাল, ছোলা, রাজমা, আপেল, নাশপাতি, কমলা, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক ইত্যাদি । ভাবছেন এগুলো কিভাবে খাবেন? আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন অন্তত ২৫–৩০ গ্রাম আঁশ জরুরী । আপনার দুপুরের খাবারে ডাল রাখতে পারেন, সেই সাথে সালাদ এবং সালাদের সাথে কিছু শাক-সবজি । আর বিকেলের খাবারে ফল রাখলেই এই চাহিদা মিটে যায় । মনে রাখতে হবে আপনার হজম ভালো হলে, শরীরও ভালো থাকবে আর মন থাকবে ফুরফুরে ।

এই খাবার তালিকায় আমাদের দ্বিতীয় খাবার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার । আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাবারের ক্যাটাগরি হলো—ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার। বয়স ৪০ পেরোলে আমাদের দেহের হাড় দুর্বল হতে থাকে। অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখে ।  স্নায়ু ও পেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে । এই জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে, গরুর দুধ, ছাগলের দুধ, টক দই, কাটঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কলিজা, ডিমের কুক্সুম ইত্যাদি । শুধু এই খাবার গুলো খেলেই হবেনা, আপনাকে একটু-আধটু গায়ে রোদও লাগাতে হবে । তাহলে আপনার শরীর ঠিকঠাক ভাবে ক্যালসিয়াম এবসজর্ব করতে পারবে ।

এই তালিকায় আমাদের তৃতীয় খাবারটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড । তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান—ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটা এক ধরনের ভালো চর্বি। ৪০ বছর বয়সের পর আমাদের হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বাড়ে, রক্তনালিগুলো সরু হতে থাকে। ওমেগা-৩ এই সব কিছু প্রতিরোধে সাহায্য করে।ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে । স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে, চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখা । যে খাবার গুলোতে আপনি ওমেগা-৩ ফ্যাটি ফ্যাটি অ্যাসিড পেতে পারেন । এই জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে সামুদ্রিক মাছ  যেমন স্যালমন, টুনা, সার্ডিন, আখরোট, আমন্ড, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড সরিষার তেল, ওমেগা-৩ যুক্ত ডিম । প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন মাছ খান। এ ছাড়াও বাদাম, ফ্লাক্সসিড খেতে পারেন ।  প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম ও সকালে এক চামচ ফ্ল্যাক্স সিড খাওয়া যেতে পারে দই বা ওটসের সঙ্গে।"

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে । ৪০ বছর বয়সের পর কোষগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। যেটা আমাদের বয়সের ছাপ ফেলে ত্বকে, চোখে এবং মস্তিষ্কে।  এ জন্য দরকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে। ফলে আমাদের ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও তরুণ । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  চোখের ছানি বা মেকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়,  ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে । এর ফলে মস্তিষ্ক থাকে সতেজ ও স্মৃতিশক্তি থাকে অটুট । 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  কোন খাবারে পাবেন?  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  আপনি পাবেন, বেরি ফল যেমন  স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আমলকি, গাজর, বিট, বেগুন, গ্রিন টি, হলুদ (কারকিউমিন) ডার্ক চকোলেট ইত্যাদিতে ।

আপনি যেভাবে এই খাবারগুলি খাবেন । রোজ সকালে এক কাপ গ্রিন টি, দুপুরে রঙিন সালাদ আর স্ন্যাকস হিসেবে মুষ্টিভর্তি বাদাম ও অল্প চকোলেট খেতে পারেন এতে আপনার শরীর থাকবে চাঙ্গা, মন থাকবে প্রফুল্ল!"

সর্বশেষ যে খাবারটির কথা বলবো সেটা হচ্ছে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার । অনেকেই ভাবেন, প্রোটিন মানে শুধু বডি বিল্ডারের জন্য খাবার । কিন্তু না ৪০ বছরের পর প্রোটিন আরও জরুরি হয়ে ওঠে । আমাদের পেশি, হাড়, হরমোন, এমনকি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রোটিনের জুড়ি নেই। এই জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে ডিম,মাছ, মুরগির মাংস (চর্বিমুক্ত), ডাল, ছোলা, সয়াবিন, বাদাম ও বীজ ইত্যাদি । এ জন্য আপনি সকালে উঠে একটি ডিম খেতে পারেন । দুপুরে মাছ, মাংস বা ডাল রাখা যেতে পারে । রাতে খাবারের পাতে রাখতে পারেন সামান্য একটু ছোলা কিংবা কিঞ্চিৎ মুরগীর মাংস । 

যদি আপনারা আলোচিত এই খাবার গুলো ঠিকঠাক মতো খেয়ে যাতে পারেন, তাহলে আপনি সুস্থ ও ফিট থাকবেন আরও বহু বছর।

এছাড়াও কিছু অতি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন । চিনির ব্যবহার কমিয়ে দিন , অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন, দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন, নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন, নিয়মিত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দিন এবং সর্বোপরি ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন । তবে আপনার বয়স চল্লিশের কম হলেও আজ থেকেই আপনি এগুলো ফলো করতে পারেন ।

বন্ধুরা, ৪০ বছর বয়স মানেই বুড়িয়ে যাওয়া নয়—এটা জীবনকে নতুনভাবে গড়ার সময়। সুস্থতা ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি হলো খাবার। আজ যে ৫ ধরনের খাবারের কথা বললাম, সেগুলো প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর থাকবে ফিট, মন থাকবে প্রাণবন্ত।

নিয়মিত হাটুন সুস্থ্য থাকুন । তো আজ এ পর্যন্তই ।  বয়স আপনার যাই হোক ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন এই কামনায় । আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.