ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রেখেও যেভাবে সুস্থ থাকবেন
রমজান মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাস । এই মাসে যারা রোজা বা সিয়াম সাধনা করে থাকেন, তাদের সারাদিন অভুক্ত বা না খেয়ে থাকতে হয় । যার কারণে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীদের রোযায় বা সিয়াম সাধনায় একটু ঝামেলা পোহাতে হয় । চাইলেই রোযার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে বা ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন না । ফলে তাদের জন্য রোযা বা সিয়াম সাধনা একটু ঝামেলা হয় । কিন্তু তাই বলে কি ডায়াবেটিস রোগীরা সিয়াম সাধনা করবেন না ? অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীরা রোযা রাখবেন এবং সুস্থও থাকবেন । তো এই রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীরা কিভাবে সঠিকভাবে খাবার খেয়ে রোযা রাখবেন এবং সেই সাথে সুস্থও থাকবেন, সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আলাপ । চলুন শুরু করা যাক ।
১ । ইফতার করুন খেজুর দিয়েঃ
যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা একটি বা দুটি খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন । কারণ খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, আছে খনিজ এবং ভিটামিনও । ফলে এটি আপনার ব্লাড সুগার বাড়তে দেয় না । এ ছাড়াও এটি আমাদের স্বস্থ্যের জন্যও বেশ ভালো ।
২ । চিনিযুক্ত ফল না খেয়ে ফলের রস খেতে পারেনঃ
যদি আপনি চিনির শরবত খান তাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে । তাই চিনিযুক্ত শরবতের পরিবর্তে য়াপনি খেতে পারেন প্রাকৃতিক ফলের রস । যেমনঃ বেল , তরমুজ, পাকা আম, পাকা পেপে কিংবা মাল্টার রস আপনি চিনি ছাড়া খেতে পারে । ফলে এভাবে আপনার ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থেকে যাবে । এ ছাড়াও আপনি ডাবের পানি, কিঞ্চিত লবণ দিয়ে লেবু পানির শরবত বানিয়ে খেলে আপনার পানি ও লবণ শূন্যতা মিটে যাবে । আপনি সামান্য একটু লবণ দিয়ে টক দইয়ের লাচ্ছি বা ঘোলও খেতে পারেন ।
৩ । সাহরিতে আমিষের সাথে সবজিও খেতে পারেনঃ
সাহরিতে আপনি মাছ, মুরগীর মাংস, ডিম বা ডাল রাখতে পারেন । তবে গরুর মাংস সপ্তাহে দু'এক দিন খেতে পারেন । আপনি দুপুরবেলা যতটুকু খেতেন সাহরিতে ততোটুকুই খেতে পারেন । সাহরিতে কোন সময়ই না খেয়ে বা স্রেফ এক গ্লাস পানি খেয়ে রোযা রাখবেন না । কারণ এতে ডায়াবেটিস রোগীরা হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় পড়তে পারেন । সাহরিতে সব ধরনের সবজি খাওয়ার অনুমোদন থাকলেও শাক জাতীয় খাবার বাদ দেয়াই আপনার জন্য ভাল । কারণ এতে বদহজম হতে পারে ।
৪ । অতিরিক্ত খাবার খেতে যাবেন নাঃ
কখনই ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না । অতিরিক্ত তৈলাক্ত পিয়াজু,বেগুনি, আলুর চপ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন । আপনার খাবার তালিকায় স্বাস্থ্যকর প্রোটিন বেশি রাখুন । যেমনঃ কাঁচা ছোলা বা সেদ্ধ ছোলা এবং খেতে পারেন টমেটো বা শসার সালাদ । আপনি টক-মিষ্টি ফলেরও সালাদ খেতে পারেন । ইফতারের পর সন্ধ্যারাতে আপনি রুটি, ওটস বা দই-চিড়া ইত্যাদি খেতে পারেন ।
৫ । ওষুধ গ্রহণে সতর্কতাঃ
আপনি আপনার ওষুধের মাত্রা বা ইনসুলিনের ডোজ কখনও নিজে নিজেই ঠিক করবেন না । ডোজ কমানো বা বাড়ানোর আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন ।
৬ । সাহরির সময়সীমাঃ
সাহরিতে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন । ইফতারোও সময় মতো করুন । যেহেতু রোযা রেখেও ইনসুলিন নেয়া যায় তাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে ইফতারের কিছুক্ষণ আগে ইনসুলিন নিতে পারেন ।
৭ । অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে সতর্ক থাকুনঃ
যদি আপনার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তাহলে আপনার নিজের কাছে সবসময় গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি রেখে দিন । যদি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে ফেলুন । আর শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগলে তাৎক্ষণিক আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । যদি আপনি এগুলো ফলো করেন, তাহলে ডায়াবেটিস থাকলেও সুস্থভাবে রোযা বা সিয়াম সাধনা করতে পারেবেন ।
কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন । আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment