দই-চিড়া কেন সেরা ইফতারি

পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান সারা বিশ্বের মুসলামানের কাছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাস । দিনভর সিয়াম সাধনার পর আমরা ইফতার দিয়ে রোযার ইতি টানি । ইফতারে আমরা শরবত, মুড়ি, পিয়াজু,বেগুনি,ছোলা, হালিম সহ নানান রকম আইটেমের খাবার দিয়ে ইফতার করি । এক কথায় ইফতার মানেই যেন ভাজাপোড়ার এক সমারোহ । সচরাচর আমরা এই সব খাবার দিয়ে ইফতার করলেও বাস্তবে, এগুলো মোটেই স্বাস্থ্যকর কোন আইটেম নয় । বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন হালকা খাবার দিয়ে ইফতার করাই আমাদের জন্য উত্তম । এই বিবেচনায় অনেকেই হালকা খাবার মনে করে দই-চিড়া দিয়ে ইফতার করেন । এবং এই খাবারটিকেই পুষ্টিবিদরা ইফতারের সেরা আইটেম বলছেন ।  কিন্তু কেন তারা এই দই-চিড়াকে সেরা ইফতারি আইটেম বলছেন সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আলাপ । তো চলুন শুরু করা যাক ।

চিড়া কার্বোহাইড্রেটের চমৎকার একটি উৎস আর প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে দই  সুপরিচিত । দই-চিড়া থেকে আমরা পাই শর্করা । এই শর্করাই সারা দিন রোজা রাখার পর আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয় । আর দই হচ্ছে একটি প্রোবায়োটিক, যেটা তৈরি হয় দুধ থেকে । আর এ জন্যেই দই থেকে আমরা খানিকটা আমিষসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি । ইফতার হিসাবে দই-চিড়া সেরা কারণঃ 

১ । দইয়ে ক্যালরি কম শক্তি বেশিঃ 

দই-চিড়া আপনাকে দ্রুতই শক্তি এনে দিবে । এবং মজার ব্যাপার এতে ক্যালরির মাত্রা কম থাকে । অন্যদিকে দই-চিড়া আমাদের ক্ষুধা বিলম্বিত করে, ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে । তাই রোযা রাখার পরও যাদের ওজন কমে না, তাদের জন্য দই-চিড়া একটি আদর্শ ইফতারি আইটেম ।

২ । দই-চিড়া হজমে উপকারীঃ

আমাদের অন্ত্র হচ্ছে একটি স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার কারখানা অর্থাৎ অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে আমাদের অন্ত্রে । তবে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাদের সুস্থতার জন্য জরুরী । আর দই হচ্ছে একটি প্রোবায়োটিক, অর্থাৎ এতে আছে অগণিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া । ফলে দই খেলে কি হবে?  দই খেলে আমাদের পেটে অর্থাৎ অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে । ফলশ্রুতিতে আমাদের পেট ভালো থাকবে। সহজ করে বললে, দই আমাদের পেট ঠান্ডা রাখবে । এ ছাড়াও দই-চিড়া সহজেই হজম হবার মতো খাবার, তাই নিজেতো হজম  হবেই, অন্যান্য খাবার গুলোকেও হজমে সাহায্য করে থাকে । অধিকন্তু দুধ থেকে তৈরি খাবার হওয়াতে দই আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে দেয় না ।

৩ । আঁশে ভরপুর একটি খাবারঃ

লাল চিড়ায় থাকে এক ধরনের আঁশ যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। লালা চিড়া  আঁশযুক্ত হওয়াতে, দই-লাল চিড়া খেলে, সেগুলো সহজেই আমাদের ক্ষুধা লাগতে দেয় না ।এই খাবার আমাদের রক্তের খারাপ চর্বিও কমিয়ে দেয় । এ ছাড়াও চিড়া আশযুক্ত হওয়াতে আমাদের দেহে ব্লাড সুগার দ্রুত বাড়তেও দেয়না আবার হুটহাট ব্লাড সুগার কমতেও দেয়না । অর্থাৎ এটি আমাদের রক্তের গ্লুকোজ ধীরে ধীরে বাড়ায় আবার ধীরে ধীরে কমায় । যেটা আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে । তাই এই খাবার যেমন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ভালো, তেমনি যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না তাদের জন্যও ভাল ।  তবে এ জন্যে আপনাকে খেতে হবে সাদা চিড়ার পরিবর্তে লাল চিড়া কারণ সাদা চিড়ায় খুব একটা আঁশ নেই। তাই আপনি যদি আঁশের উপকারিতা পেতে চান তাহলে লাল চিড়া আপনার খাবার মেনুতে লিপিবদ্ধ করুন । 

৪ । আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ করেঃ

দিনের বেলায় যেহেতু আমরা কর্মব্যস্ততায় থাকি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেহে ক্ষয় হয়, আর সেটা পূরণ করতে প্রয়োজন হয় আমিষ । প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত আমিষ আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণের জন্য বেশি কার্যকর । আর এই প্রাণিজ উৎসের চমৎকার একটি রেসিপি হচ্ছে দই-চিড়া । তাই সারা দিন রোজা রাখার পর যখন আমরা ইফতারে দই-চিড়া খাব তখন দইয়ের আমিষ আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণ করতে সাহায্য করে  । যার ফলে আমরা সহজেই রাতের অন্যান্য কাজের জন্য নিজেকে পূর্ণ উদ্যমে প্রস্তুত করে নিতে পারি । 

৫ । এ ছাড়াও যেটা করেঃ

দই-চিড়ার মতো একটি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে এটি খেলে আস্তে আস্তে আপনার ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে । আর যেহেতু ভাজাপোড়া খাওয়া আপনার কমে যাবে, তাই আপনি সুস্থও থাকবেন। তবে দই–চিড়া যখন খেতে যাবেন চিনি বা গুড় ছাড়াই খাওয়ার চেষ্টা করবেন । চিনি বা গুড় ছাড়া হয়তো স্বাদ একটু কম লাগে, তাই চিড়া ভেজানোর সময় সামান্য একটু লবণ যোগ করতে পারেন, তাহলে আর অতোটা স্বাদহীন লাগবে না । দই-চিড়ার সঙ্গে আপনি কলা বা অন্যান্য ফল যোগ করে খেতে পারেন ।  এভাবে খেলে আপনি সেসব ফলের পুষ্টিও পাবেন,  খাবারে স্বাদও বাড়বে । আপনি এই দই-চিড়া ইফতার অফিসে বা দোকানে যেকোন জায়গাতেই অনায়াসে খেতে পারেন । কারণ দই-চিড়ার ইফতার তৈরি করা খুবই সহজ। এটি আমাদের প্রাচীন গ্রাম বাংলার চিরায়ত খাবার । আমাদের বাব-দাদারা আয়েস করে খেতেন ।

দর্শক কৃত্রিম বা আরটিফিসিয়াল এই যুগে ন্যাচারাল ফুড পাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য । সেখানে আপনি চাইলে সহজেই এই দই-চিড়া অনায়াসে ম্যানেজ করতে পারেন ।

এই ছিলো আজকের মতো । কেমন লাগলো কমেন্টে জানাতে পারেন । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।



No comments

Powered by Blogger.