যে ১০টি লক্ষণ ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়
ক্যান্সার মরণঘাতী রোগ এতে কোন সন্দেহ নাই । কিন্তু বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্তের বেঁচে থাকার হার তিনগুণ বেড়েছে । তবে সেটা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে তাহলে । বেশিরভাগ ক্যান্সারই চিকিৎসা যোগ্য এবং যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে ভাল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায় । ইচ্ছে করেই হোক বা অজ্ঞতার কারণেই হোক আমরা হালকা বা শুরুর দিকের লক্ষণ নিয়ে ডাক্টারের কাছে যেতে চাইনা । অর্থাৎ ক্যান্সার যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখন আমরা সেভাবে আমলে নেইনা বা গুরুত্ব দেই না । ফলে আমাদের ক্যান্সার শুরুর দিকে ধরা পড়ে না । আর শুরুর দিকে আমাদের ক্যান্সার শনাক্ত বা ধরা না পড়ার কারণেই আমাদের জীবন বিপন্ন হয় । আমরা আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হই । প্রত্যেকটা অসুখের যেমন নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ বা চিহ্ন আছে । তেমনি মরন ব্যাধি ক্যান্সারেরও নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন বা লক্ষণ আছে । তো আজকের লেখাতে আমি আপনাদের সাথে মরন ঘাতক ক্যান্সারের ১০টি চিহ্ন বা লক্ষণ নিয়েই আলাপ করতে চলেছি । এতক্ষণ যারা সঙ্গে ছিলেন আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন । চলুন শুরু করা যাক ।
ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ
১ । কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়াঃ
যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের ওজন কোন এক সময় কমতে শুরু করে । যখন কেউ কোন কারণ ছাড়াই ওজন হারাতে থাকবে, তখন সেটাকে ব্যাখ্যাহীন ওজন হারানো বলা হয়ে থাকে । এবং এটাই চিন্তার কারণ । যদি কোন কারণ ছাড়াই আপনার ওজন ৪/৫ কেজি কমে যায়, তাহলে এটি আপনার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে । তবে এই ওজন কমে যাওয়াটা অগ্নাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী কিংবা ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
২ । হতে পারে জ্বরঃ
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর । ক্যান্সার যখন আক্রান্ত স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন রোগীর প্রায়ই জ্বর হয় । বিশেষ করে ক্যন্সার যখন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে, তখন জ্বরটা বেশি দেখা যায় । এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে জ্বর লিউকোমিয়া বা লিম্ফোমা ক্যান্সারের উপসর্গও হতে পারে ।
৩ । ক্লান্তি লাগাঃ
ক্লান্তি ক্যান্সারের একটি অন্যতম উপসর্গ । পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবার পরেও যদি ক্লান্তি ভর করে, তবে বুঝতে হবে ঘাবলা আছে । ক্যান্সার বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্লান্তিও বাড়তে থাকে । ব্লাড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ক্লান্তি ভর করে । কোলন ক্যান্সার বা পাকস্থলির ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রক্তপাত হয়ে থাকে ফলে এ ক্ষেত্রেও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে ।
৪ । ত্বকে পরিবর্তন হতে পারেঃ
ত্বকের ক্যন্সারে ত্বকের পরিবর্তনের পাশাপাশি আরোও কিছু ক্যান্সারের কারণেও ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে । ত্বকের পরিবর্তনের গুলোর মধ্যে আছে ত্বক কালো হয়ে যাওয়া, ত্বক এবং চোখ হলুদ হওয়া, ত্বক লাল হওয়া । এ ছাড়াও অতিরিক্ত ত্বকের চুলকানি ।
৫ । অন্ত্র বা মুত্রাশয়ের কাজে পরিবর্তনঃ
ডায়রিয়া বা মলের আকারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে । প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে, প্রস্রাবে রক্তপাত হতে পারে । অনেক সময় প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে আবার কমেও যেতে পারে ।
৬ । যে ধরনের ক্ষত সেরে ওঠেনাঃ
যদি আপনার ত্বকে আঁচিল হয় এবং সেটি বৃদ্ধি পায়, ব্যথা হয় বা রক্তপাত হয়, তাহলে এটি ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে । যদি আপনার দেহে কোন ক্ষত হয় এবং সেটি চার সপ্তাহের পরও ভাল না হয়, তাহলে সেটিকে ক্যান্সারের উপসর্গ বলা যেতে পারে । যদি আপনার মুখেও এমন কোন ক্ষত হয় যে, সেটিও দীর্ঘ সময় ধরে সেরে উঠছে না তাহলে সেটিও মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে । এ ছাড়া লজ্বাস্থানেও দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষত হতে পারে বিশেষ করে মেয়েদের জরায়ুতে যেটি লম্বা সময় সারছেনা । এ ক্ষেত্রেও আপনাকে সচেতন হতে হবে ।
৭ । রক্তপাত হওয়াঃ
আপনার দেহে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে বা কাশির সাথে রক্তপাত হতে পারে, যেটি ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে । যদি আপনার মলের সাথে রক্তপাত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মলাশয় বা মলদ্বারে ক্যান্সার হতে পারে । আপনার যনি পথে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে, আপনার মূত্রের সাথে রক্তপাত হতে পারে, এটিও ক্যান্সারের লক্ষণ । এ ছাড়াও আপনার স্তন বৃন্তে বা স্তনের বোটা থেকে রক্তপাত হলে, সেটাও ক্যান্সারের উপসর্গ বলা যেতে পারে ।
৮ । দেহের কোন স্থান শক্ত হয়ে যেতে পারেঃ
এ ক্ষেত্রে আপনার দেহে মাংস শক্ত হয়ে যেতে পারে । এগুলো সাধারণত হয় স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং নরম টিস্যুতে । এ ক্ষত্রে মনে হয় মাংস জমে আছে ।
৯ । গিলতে অসুবিধা হতে পারেঃ
প্রতিনিয়ত বদহজম বা কোন কিছু গিলতে গেলে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে সেটা ইসোফ্যাগাস, পাকস্থলি বা থ্রট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
১০ । একটানা কাশি বা কন্ঠস্বরের পরিবর্তনঃ
যদি আপনার একটানা অনেক দিন কাশি হয়, তাহলে সেটি ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে । টানা তিন সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ । এ ছাড়াও আপনার কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হলে, সেটা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সার হতে পারে ।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন এতক্ষণ যে উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো আলোচনা করা হোল, সেগুলো দেখা দিলেই যে ক্যন্সার নিশ্চিত এমনটা ভাবার কোনই কারণ নাই । কেননা সেই উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো শারীরিক আরোও অন্য কারণেও হতে পারে । তবে আলোচিত উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনার চিকিতসকের সাথে দ্রুতই সাক্ষাত করা উচিত ।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ । কেমন লাগলো কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment