ডায়াবেটিসে রোজা রাখা যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । ভাবা যায় অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো প্রায় ৫টা দেশের সব মানুষই নিরব ঘাতক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । আবার এই সংখ্যাটা যদি শুধু মুসলমান ধরি তাহলে সেটা দাড়ায় প্রায় ১৫ কোটি । অর্থাৎ সারা বিশ্বে মুসলমান ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি । আর এই বিপুল সংখ্যক মুসলিম ডায়াবেটিস রোগীর অনেকেই পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করেন বা রোযা রাখেন । তবে ডায়াবেটিস রোগীরা রোযা রাখলে বা সিয়াম সাধনা করলে তাদের জীবনের ঝুঁকি তৈরী হবার আশঙ্কা রয়েছে । যারা ইনসুলিন নিয়ে চিকিৎসা করেন তাদের জীবনের ঝুঁকি একটু বেশি আবার যারা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করেন তাদের জীবনের ঝুঁকি একটু কম । যারা ইনসুলিন নিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, তাদের রক্তে যেকোন সময় গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে । সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোযা রাখ উচিৎ । তো এই ডায়াবেটিস রোগীদের রোযা রাখা কোন কোন ক্ষেত্রে ঝুঁকি পূর্ণ সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আলাপ । আজকের আলাপ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোযাদারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে । আশা করছি তারা শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন । চলুন শুরু করা যাকঃ

কোন কোন ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ঝুঁকি পূর্ণঃ

১ । রোগীর বয়স বিবেচনায় ঝুঁকি পূর্ণ হতে পারে, ডায়াবেটিসের ধরন ও সময়কাল বিবেচনায় ঝুঁকি পূর্ণ হতে পারে । আবার অন্যান্য রোগ, বিশেষ করে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, ইনসুলিনের মাত্রা, শরীরচর্চার ধরন কিংবা সময়কাল ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীদের বিপাক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া রোগীর ব্লাড সুগারের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে এবং সেটা কমে গেলে উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকা বা না থাকার ওপরও জীবনের ঝুঁকি নির্ভর করে ।


  • ২ । যে সমস্ত রোগী টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় বেশি। আবার যাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের ঝুঁকিও অন্যদের তুলনায় বেশি।

  • ৩ । যে সমস্ত ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাঁদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যাঁরা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা নিচ্ছেন , তাঁদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণেই বেশি। এর কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে সেটা হচ্ছে, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে ।

  • ৪ । সেই সমস্ত প্যাসেন্ট যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় এবং এই গ্লুকোজ কমে যাওয়ার অবস্থাটা যদি তারা বুঝতে ব্যর্থ হন । তাহলে তাদের জন্য রোযা রাখা ঝুঁকি পূর্ণ । 

  • আবার যে সমস্ত ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট বারবার হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত হন তাদের জন্য রোযা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ । কিংবা রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ায় যে সমস্ত ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট সাম্প্রতিক সময়ে অচেতন হয়েছেন অথবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্যও রমজানে রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ ।

  • ৫ । ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যাঁদের অন্যান্য অসুখ আছে, বিশেষ করে যাদের কিডনি বিকল রয়েছে, তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব বেশি মাত্রায় কম বেশি হয় । তাই তাদেরও রোযা রাখা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

  • ৬ । গত তিন মাসে কতটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ আছে, সেটি নির্ণয়ের জন্য রক্তের একটি পরীক্ষা রয়েছে। এই পরীক্ষাকে বলা হয় এইচবিএ-১সি। এর মাত্রা যদি শতকরা ৯–এর বেশি হয়, তাহলে তার জন্য রোযা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ ।

  • ৭ । সাহ্‌রি থেকে ইফতার পর্যন্ত অর্থাৎ রোযার ব্যপ্তিকাল বা সময় যদি ১৬ ঘণ্টার বেশি হয়, তাহলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয় ।

  • ৮ । যাঁরা শারীরিক পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের জন্য রোযা রাখার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।

  • দর্শক আপনি যদি ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট হয়ে থাকেন আর এতক্ষণ যে ক্যাটাগরী গুলো আলোচনা করা হোল, আপনি যদি সেগুলোর কোন একটিতে পড়েন, তাহলে রোযা রাখার আগে আপনার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী । নাহলে আপনার জীবন বিপন্ন হতে পারে ।

  • আজকের আলোচনা আপনার কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ । 

No comments

Powered by Blogger.