দেহের যে অঙ্গগুলোতে ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রকাশ পায়
ডায়াবেটিসকে বলা হয় নিরব ঘাতক । কারণ ডায়াবেটিস নিজে তো আক্রান্ত ব্যক্তিকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেই, সেই সাথে আমাদের কিডনি এবং হার্টকেও আস্তে আস্তে অসুস্থ করে ফেলে । এ ছাড়াও শারীরিক আরো নানান বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে । সবচেয়ে যেটা হতাশার তা হচ্ছে একবার এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এই রোগ সারাজীবন আপনাকে বয়ে বেড়াতে হয় । অনেক সময় আপনার অকাল মৃত্যুও ডেকে নিয়ে আসে । বর্তমান সারা বিশ্বে প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । একজন নয় দুজন নয় ৮৩ কোটি । অর্থাৎ আমাদের সারা দেশে যত মানুষ আছি তার প্রায় ৫ গুন বেশি মানুষ সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । আরোও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে । বলা যায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যাবে । ডায়াবেটিস হলে বারবার পানির পিপাসা লাগে, ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, শরীর ক্লান্ত লাগে, দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে এবং দেহের ওজন কমে যেতে পারে । ডায়াবেটিসের কারণে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে দেহের ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় । যার কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সহজে পৌঁছাতে পারেনা । ডায়াবেটিস রোগে কোন কোন অঙ্গে কি কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে বা লক্ষণ প্রকাশ পায় সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আলাপ । আশা করছি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সাথে পাবো । তো চলুন শুরু করা যাকঃ
১ । চোখের উপর প্রভাবঃ
আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে চোখের রেটিনার রক্তনালিগুলোতে প্রভাব পড়ে । এর ফলে আমাদের দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, চোখে ছানি পড়তে পারে, গ্লুকোমা হতে পারে এমনকি মারাত্বক ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিও হবার সম্ভাবনা থাকে ।
রেটিনোপ্যাথির কারণে আমাদের চোখে রেটিনার পরিবর্তন ঘটে । যদি সঠিকভাবে রেটিনোপ্যাথি চিকিৎসা না হয়, তাহলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে এবং সেই সাথে অন্ধত্বও বরন করা লাগতে পারে ।
২ । পায়ের উপর প্রভাবঃ
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটার প্রভাব আমাদের পায়েও পরে । আমাদের পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে । ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় । যার ফলে আমাদের পায়ের বিভিন্ন ক্ষত সেড়ে উঠতে সময় নেয় । আস্তে আস্তে ডায়াবেটিক ফুট বা ঘা হতে পারে । এমনকি সঠিক চিকিৎসা না নিলে অনেক সময় পা কেটে ফেলতে হয় ।
৩ । কিডনির উপর প্রভাবঃ
কিডনি আমাদের দেহকে দূষণ থেকে রক্ষা করে । দেহ থেকে সব ধরনের টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে বের করে দেয় । এই কিডনির কার্যকারিতায় সাহায্য করে কিডনিতে থাকা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালি ।
আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালি গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয় । ফলে কিডনি ঠিকঠাক কাজ করতে পারেনা । যেটাকে বলা হয় নেফ্রোপ্যাথি । এর ফলে প্রস্রাবে প্রোটিন বেড়ে যায়, বারবার প্রস্রাবের চাপ আসে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকেনা, পা, গোড়ালি, হাত এবং চোখ ফুলে যায়, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে, ক্লান্তি লাগে এ ছাড়াও আরোও অনেক কিছুই হতে পারে ।
৪ । স্নায়ুর উপর প্রভাবঃ
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামক স্নায়ুর ক্ষতির কারণ হয়ে দ্বাঁড়ায় । ফলে অসাড়তা বেড়ে যায়, ব্যথা বা তাপমাত্রা অনূভব করার ক্ষমতা হ্রাস পায় । এ ছাড়াও জ্বালাপোড়া, তীব্র ব্যথা, মারাত্বক পায়ের আলসার বা সংক্রমণের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৫ । হার্টের উপর প্রভাবঃ
আমাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্টের রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে । ফলে স্ট্রোক এবং হৃদরোগের মতো কার্ডিওভাস্কুলার জটিলতা বেড়ে যেতে পারে । তাই ডায়াবেটিস প্যাসেন্টরা উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিতে বেশি পড়েন ।
৬ । দাঁতের মাড়িতে প্রভাবঃ
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে দাঁতের মাড়িতেও রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং পেশি শক্তি কমে যায় । ফলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হয় এবং মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে ।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিভাবে কমাবেনঃ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে । স্বাস্থকর, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এরিয়ে চলতে হবে ।
আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । এ জন্য আপনি নিয়মিত শরীর চর্চা করতে পারেন । ধুপমান এবং এলকোহল সেবনকে না বলুন । নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং সেই সাথে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলার চেষ্টা করুন ।
সম্মানিত সুধি, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment