যে খাবার আপনাকে সুখী করতে পারে ।
পাঠক আমাদের এই পৃথিবীতে সুখি হতে চায়না, এমন মানুষ আপনি খুজে পাবেন ? আমার মনে হয় না খুঁজে পাওয়া যাবে । আমরা সবাই সুখি হতে চাই । এই সুখের জন্য আমরা কত কিছুই না করি । কত রকমের চেষ্টা, চেষ্টায় আমাদের কোন কমতি নেই । তবুও সুখ যেন সোনার হরিণ, কেবলই মরীচিকা । কেউ হয়তো এই সুখ নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবনটাই শেষ করে দেই, কিন্তু তবুও হয়তো সুখের ঠিকানা খুঁজে পাই না । কিন্তু বিজ্ঞান বলছে এই সুখ নাকি খাবার থেকেই আপনি পেতে পারেন ? কি বিশ্বাস হচ্ছে না । ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি । হ্যাঁ আপনি বা আমি কয়েক ধরনের খাবার খেয়েও সুখ নামক সোনার হরিণ পেতে পারি । ব্যাপারটা বেশ মজার মনে হচ্ছে, তাই না । দর্শক আজকের ভিডিওতে আমি আপনাদের এই মজার কাহিনী এবং কোন খাবার গুলো খেলে আপনি সুখ নামক সোনার হরিণ পেতে পারেন, সেটা নিয়েই আলাপ করবো । দূরে থাকলে কাছে এসে বসুন মন দিয়ে শুনুন । তো চলুন শুরু করা যাক ।
আমরা সুখ অনুভব করি বা আমাদের মধ্যে আনন্দের ফিলিংস আসে এক ধরনের হরমোনের কারণে । যেমন ডায়াবেটিসের কারণ ইনসুলিন নামক হরমোন । ঠিক সেই রকম আমাদের সুখের অনুভূতি জাগায় এই হরমোন । দর্শক এই হরমোন গুলোর নাম কি জানেন? এগুলোর নাম হচ্ছে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন । এই চার ধরনের হরমোন হ্যাপি হরমোন বা সুখের হরমোন হিসেবে পরিচিত । দর্শক তাহলে আমরা কি বুঝলাম ? আসলে আমাদের আনন্দ বেদনার অনুভূতি এনে দেয় এই হরমোন ।
তো এখন যদি আমরা এমন সব খাবার খাই, যেগুলো এই ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন এই চারটা হরমোনের প্রভাব বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা সুখ বা আনন্দ অনুভব করবো । অর্থাৎ এই চার জাতীয় হরমোন যে সব খাবার বাড়িয়ে দিতে পারবে, সে খাবার গুলো আমাদের সুখি করতে পারবে । তাই বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের বাড়তি আনন্দ ও সুখের অনুভূতি দেয়। এই খাবার গুলো খেলে শরীরে সুখের হরমোন বা হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এতে আমাদের সুখানুভূতি হয় বা আমারা সুখ অনুভব করি ।
আগেই বলেছি এই সুখি হরমোনের ভেতর একটি হচ্ছে ডোপামিন । এই ডোপামিন নিঃসরণে খাবারের ভূমিকা আছে যথেষ্ট । আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাবে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে । আর আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে পারে গুড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার, ফার্মেন্টেড ফুড ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার । এ ছাড়াও পেটিযুক্ত মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টকদই, পান্তা, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার পর্যাপ্ত হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় । তবে ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এর বাইরে হাসিখুশি থাকা, বেড়াতে যাওয়া, পছন্দের পোশাক পরার কারণেও আমাদের দেহে ডোপামিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি হয়।
আমাদের অন্ত্রের পেশির চলাচলে সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন আমাদের মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন আমাদের মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদিতে প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের দেহে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে প্রভাব ফেলে ওমেগা-৩ফ্যাটি অ্যাসিড, আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি । এই খাবারগুলোর পাশাপাশি যদি আপনার রাতের ঘুম ভালো হয়, তাহলে আপনার সেরোটোনিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পেয়ে যায় । ফলে আপনার সুখানুভূতিও বেড়ে যায় ।
আমাদের ব্যথার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে এন্ডোরফিন হরমোন । এন্ডোরফিন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। তাই আমাদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার যেমন দারুচিনি, লবং, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে। আমরা শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে ।এভাবে এন্ডোরফিন ব্যথা নিরাময় করে আমাদের স্বস্তি এনে দেয় । অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয় । তাই ওজন ও রক্তচাপ কমাতে পারে এমন খাবার আমাদের খেতে হবে । এই জাতীয় খাবার হচ্ছে লো-কার্ব, হাইপ্রোটিন, মডারেট গুড ফ্যাট ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার । খাবার ছাড়াও হাসি-খুসি থাকলে, পছন্দের গান শুনলে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে, ব্যায়াম করলে আমাদের দেহে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় ।
চারটি সুখি হরমোনের একটি হচ্ছে অক্সিটোসিন । এটি শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে তৈরি হয় । এটি মানুষের পেছনে থাকা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসরণ হয় । এই অক্সিটোসিন স্তন্যপায়ীদের মস্তিষ্কে কাজ করে । মানুষের শরীরে এটি নারীদের প্রজননের সময় নির্গত হয়, বিশেষ করে সন্তান প্রসবকালে ও প্রসবের পরে । এই সুখি হরমোন অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ভিটামিন ‘সি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । সুতরাং এই হরমোন পেতে আমাদের খেতে হবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ খাবার । এতে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ বেড়ে আমাদের সুখানুভূতিও বেড়ে যাবে ।
আমাদের দেহের সবচেয়ে অবহেলিত অঙ্গ হচ্ছে ক্ষুদ্রান্ত্র। অস্বাস্থ্যকর বা নিম্ন মানের খাবার খেলে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে। যার ফলে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার ক্ষুদ্রান্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে দেয় । এর ফলে আমাদের গ্যাস, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি আস্তে আস্তে বেড়ে যায় । আবার অনেক সময় আমরা নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি । এই ওষুধ গুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যেতে পারে । আর এসবের কারণে ডোপামিনসহ সব ধরনের সুখি হরমোনের নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে । ফলে আমাদের সুখও কমে যায় ।
তাহলে সুখি হরমোন বৃদ্ধিতে আমাদের করণীয় কি ?
১ । গ্যাস্ট্রিকের ওষুধসহ যেকোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেতে যাবে না।
২ । লাল আটা, ফাইবারসমৃদ্ধ চাল খাওয়ার অভ্যাস করবেন ।
৩ । ফার্মেন্টেড খাবার যেমন টকদই, পান্তা এগুলো খেতে হবে । সপ্তাহে ২-৩ দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন ।
৪ । প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে । সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন কাছাকাছি দূরত্বে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে । রাতের বেলা কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দিতে হবে ।
আশা করি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে । ভালো লেগে থাকলে লাইক,শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment