এক চামচ মিষ্টিকুমড়ার বীজে এতো উপকার
মিষ্টি কুমড়া আমাদের একটি অতি পরিচিত এবং পুষ্টিকর রঙিন সবজি । এতে আছে প্রচুর পুষ্টিকর গুণাবলী । কিন্তু এই মিষ্টি কুমড়ার বীজেও যে, প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে সেটি আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা । এটি আমাদের দেহের জন্য দারুন একটি টনিক । অনেকেই আমরা এই বীজ না বুঝে ফেলে দিয়ে থাকি । দর্শক আজকের পর থেকে আর কখনই এই মুষ্টি কুমড়ার বীজ আপনারা অবহেলা করে ফেলবেন না । মিষ্টি কুমড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হতে পারে দারুন একটি উপকরণ । এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস । এতে নেই কোলেস্টেরল, আছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম,ফসফরাস, কপার, ভিটামিন ই, আয়রন এবং ফাইবার । তাই এটি আমাদের দেহের জন্য দারুন উপকারী । পাঠক আজকের লেখাতে আমি আপনাদের জানাতে চলেছি, কেন আপনারা আজ থেকে নিয়মিত খাবেন মিষ্টি কুমড়ার বীজ । তো চলুন শুরু করা যাক ।
আপনারা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে কি কি স্বাস্থ্য উপকারীতা পাবেন ? আসুন আমরা এক এক করে জেনে নেই ।
১. হৃৎপিণ্ডের জন্য দারুণ স্বাস্থ্যকর
কুমড়ার বীজে থাকে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম, যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও হৃৎপিণ্ডকে সুস্থভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। এর বাইরে এতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়িয়ে দেয় । ফলে আমাদের হৃৎপিণ্ডের অসুখের ঝুঁকি কমে আসে এবং কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখ্তে সাহায্য করে ।
২. ভালো ঘুমের সহায়ক
যারা ইনসোমনিয়া বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ভুগছেন, তাঁদের জন্য মিষ্টিকুমড়ার বীজ ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির মতো চমৎকার একটি টনিক হতে পারে । এতে আছে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে। আর এই দুটি হরমোন আমাদের স্বাভাবিক ঘুমের জন্য দারুন কার্যকর । আপনি যদি রাতে শোয়ার আগে এক টেবিল চামচ কুমড়ার বীজ খেতে পারেন, তাহলে আপনার ভালো ঘুম হবে এবং ঘুমের চক্র থাকবে আপনার নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়াও এর ম্যাগনেশিয়াম আমাদের দেহের পেশি ও স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে রাতের আমাদের ঘুমটা বেশ ফুরফুরে হয়।
৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে
এই ছোট্ট সুপারফুড মিষ্টি কুমড়ার বীজে আছে প্রচুর জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে কাজ করে । বিশেষ করে জিঙ্ক আমাদের স্নায়ুর সংকেত আদান-প্রদান ও মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত মিষ্টিকুমড়ার বীজ খেলে আমাদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বেড়ে যায় এবং কমে যেতে পারে আলঝেইমার্স ডিজিজসহ স্নায়ুর রোগের ঝুঁকি ।
৪. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
যদি আপনি আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করতে চান, তাহলে নিয়মিত মিষ্টিকুমড়ার বীজ খাওয়া চালিয়ে যান । এই মিষ্টি কুমড়ার বীজে আপনি পাবেন জিঙ্ক ও ভিটামিন ই । এই দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । শুধু তাই নয়, জিঙ্ক আমাদের দেহে ক্ষত সারিয়ে তুলতে এবং ঠান্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন ই কাজ করে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে, যা আমাদের দেহে প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে ।
৫. পাচনতন্ত্র ও অন্ত্রের জন্য দারুন কাজ করে
যদি আপনি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার পরিপাকক্রিয়া দারুন কার্যকর থাকতে হবে । আর এই মিষ্টিকুমড়ার বীজ সেই কাজটি করে আমাদের অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকে ফাইবার বা আঁশ যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে সড়িয়ে রাখে এবং অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে। গত বছরের মার্চ মাসে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মিষ্টিকুমড়ার বীজে থাকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক গুণ, যার ফলে এটি অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূরে ঠেলে দেয় এবং আমাদের দেহে হজমক্রিয়া ভালো করতে সাহায্য করে ।
তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই আপনি এই ক্ষুদ্র সুপারফুড মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment