চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে যে ১০টি উপকার পাবেন
এই যে দেখছেন চিনি । আমরা সবাই কম বেশি এই চিনি খেয়ে থাকি । কিন্তু আপনি যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই পরিশোধিত চিনি খাওয়া ছেড়া দিতে পারেন তাহলে সেই সিদ্ধান্ত আপনাকে এনে দিতে চমৎকার কিছু উপকার । চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে যেমন আপনার ওজন কমবে, সেই সাথে নানা রকম রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনাও যাবে বেড়ে। যদি আপনি চিনি কম খান তাহলে আপনি শরীরে আগের চেয়ে বেশি বল পাবেন। এমনকি আপনার দেহের ত্বক এবং বাহ্যিক চেহারাও আগের চেয়ে সুন্দর হতে পারে। চিনিমুক্ত খাদ্যাভ্যাস যখন আপনি গড়বেন তখন আপনার সারা দিন হাবিজাবি খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে । আপনার মনমানসিকতায় আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং আপনি আগের চেয়ে আরোও ভালোভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও আস্তে আস্তে কমতে থাকবে । মিলবে আরোও নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা । আজকে আমরা এই স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো নিয়েই আলাপ করবো । তো চলুন, দেখে নেওয়া যাক খাদ্যতালিকা থেকে চিনি নামক এই ‘নীরব ঘাতককে’ ছুড়ে ফেললে আমরা কি কি উপকারিতা পেতে পারি ।
১ । ওজন কমে যাবে
যদি আপনি চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন আপনার ওজন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে। ওজন যদি সারা জীবনই আপনি কম রাখতে চান, তাহলে চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার বিকল্প নেই। পরিশোধিত চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার অর্থ হলো, আপনি এমন কিছু খাবার খাওয়া বাদ দিচ্ছেন, যেসবে্র মধ্যে শুধু ক্যালরি আছে, পুষ্টিগুণ নাই বললেই চলে । এসবের মধ্যে আছে পাস্তা, কুকিজ, ব্রেড ইত্যাদি। মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া অনেক সময় আমাদের জন্য নেশার পর্যায়ে চলে যায়। যখন একটা খাই তখন মনে হয় আরও একটা খাই । যদি আপনি পরিশোধিত চিনি খাওয়া বাদ দেন তাহলে আপনার স্ন্যাকস খাওয়ার পরিমাণও কমতে থাকবে, ফলে আপনার ওজনোও কমবে ।
২ । পেটের মেদ ঝরে যাবে
যখন আপনি বেশি বেশি মাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার খাবেন তখন হৃৎপিণ্ড এবং পেটের চারপাশে জমে থাকা চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকবে । গবেষণার প্রাপ্ত ফলের পর্যালোচনা থাকে জানা যায়, এসব চর্বি থেকে নানা রোগবালাইয়ের উৎপত্তি হয়। আপনি যদি পরিশোধিত চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে আপনার যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়ের চারপাশে যেসব ক্ষতিকর চর্বি জমে থাকে সেই ক্ষতিকর চর্বিগুলো ধীরে ধীরে গলতে শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, চিনি আমাদের শরীরে প্রদাহ বাড়ায়। ফলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। এর ফলে শরীর তখন পেট ও তার চারপাশে চর্বি জমা করতে শুরু করে। চিনি এবং অন্যান্য পরিশোধিত খাদ্যদ্রব্য আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় । এই অতিরিক্ত ইনসুলিনের প্রভাবেও শরীর চর্বি সংরক্ষণ করতে শুরু করে। তাই পেটের ক্ষতিকর চর্বি থেকে সহজে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে ।
৩ । ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাবে না
আপনি যদি চিনি খাওয়া বাদ দেন তাহলে দেখবেন আপনার নিজের ত্বকের স্বাস্থ্যের এমন কিছু উন্নতি দেখতে পাবেন, যা হয়তো আপনার কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হবে । যদি আপনি চিনি কম খান তাহলে আপনার ত্বক তারুণ্যদীপ্ত থাকবে, ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়াও কমতে থাকবে । উচ্চ মাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার এমন কিছু উপাদান বাড়ায়, যা আমাদের ত্বকের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত করে ।
৪ । কর্মশক্তি বাড়বে
যদি আপনি চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে দেখবেন চিনি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পরপরই আপনি নিজের ভেতর এমন কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হঠাৎ করেই আপনার এনার্জির পরিমাণ বেড়ে যাবে। পরিশোধিত চিনি এবং স্ন্যাকস খাওয়া ছেড়ে দিলে আপনার শরীরে চিনির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত থাকবে । দিনভর আপনার মনমানসিকতা এবং এনার্জি লেভেল একই রকম বজায় থাকবে। অসময়ে আপনার ঘুম ঘুম লাগবে না, মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে এবং ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার মনটাও থাকবে ফুরফুরে ।
৫ । দুপুরবেলা আর ক্লান্ত লাগবে না
আমাদের অনেকেরই খাওয়ার পরে, বিশেষ করে দুপুরে খাওয়ার পর একটু ক্লান্ত ফিল করি । অফিসে লাঞ্চ করার পরে অনেকেরই মনে হয়, ঈশ যদি একটা বিছানা থাকত!’ যদি আপনি চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন তাহলে এমন ক্লান্তি আর আপনার ওপর ভর করবে না। আপনি চিনি কমিয়ে উচ্চ আঁশ এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে আপনার গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে সারা দিন, এমনকি দুপুরে খাওয়ার পরও আপনি কর্মতৎপর থাকবেন। কম জিআই বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বিশিষ্ট খাবার খেলে আপনার শারীরিক শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তাও বেড়ে যাবে ।
৬ । মনোযোগ বাড়বে
যখন আপনার ঘুমকাতুরে ভাব থাকবে না এবং কর্মচঞ্চল থাকবেন, তখন আপনার মনোযোগ ও কর্মদক্ষতা এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনি সারা দিনের সব কাজ ঠিকঠাক সময়মতো করতে পারবেন। নিজের ও পরিবারের জন্য আপনার কোয়ালিটি টাইমের পরিমাণও বেড়ে যাবে ।
৭ । ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমবে
যখন আপনি চিনিযুক্ত খাবার কম খাবেন, তখন আপনার যকৃৎ সুস্থ থাকবে, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিও কমে যাবে । শুধু তাই নয় চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে আপনার যকৃতে চর্বির পরিমাণ কমবে এবং যকৃতের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে ।
৮ । ক্ষুধার যন্ত্রণা কমবে
আমাদের খাওয়ার পর পরিশোধিত চিনির বিপাক খুবই দ্রুত ঘটে। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা সহসাই বেড়ে যায় । যখন আপনি অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার বেশি খাবেন, তখন আপনার ঘন ঘন ক্ষুধা লাগবে। এর কারণ, এসমস্ত খাবার খুবই দ্রুত হজম হয়ে যায় । আপনি যতই বেশি ক্যালরি গ্রহণ করবেন, আপনার ওজনও ততই বৃদ্ধি পাবে । যদি আপনি খাবার থেকে পরিশোধিত চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে আপনার ক্যালরির মাত্রা থাকবে নিয়ন্ত্রিত ।
৯ । হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমবে
যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হাই কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ে যায় । তাই যখনই আপনি, চিনি খাওয়া কমিয়ে দিবেন, আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যাবে । গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের মতে, যখন আপনি চিনি বেশি খাবেন, তখন আপনার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে ।
১০ । মন ভালো থাকবে
যখন আপনি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, তখন আপনি আপনার আবেগও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন । যার ফলে আপনার মনকে সারা দিন নিয়ন্ত্রণে রাখা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে ।
সম্মানিত সুধি, চাইলে আজ থেকেই আপনি চিনি খাওয়া আস্তে আস্তে ছেড়ে দিতে পারেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment