শরীরে শর্ষের তেল মাখার এতো উপকারিতা

এই শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করি । কেউ লোশন, কেউ পেট্রোলিয়াম জেলি, কেউ বা নারিকেল তেল, আবার কেউ কেউ শরণাপন্ন হই শর্ষের তেলের। এগুলোর ভেতর কোনটি ভালো, তা নিয়ে একটু আধটু বিতর্ক হতেই পারে ।  তবে শর্ষের তেল যে প্রাকৃতিক গুণে ভরপুর এবং ত্বকের জন্য উপকারীই সেটা নিয়েই আজকের আলাপ । তো চলুন শর্ষের তেলের উপকারিতাগুলো জেনে নেয়া যাক ।

১ । এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ

শর্ষের তেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর একটি পণ্য । এতে থাকে ভিটামিন ই। আর এই ভিটামিন ই আমাদের ত্বককে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং শীতে আমাদের দেহের ত্বকের স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ত্বকের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং আমাদের বার্ধক্যের লক্ষণ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এই শর্ষের তেল ত্বকের আর্দ্রতা সুরক্ষিত রাখে, যা এই শীতে আমাদের জন্য খুবই জরুরী ।

২ । চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ঘটায়

এই শর্ষের তেল নিয়মিত মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে শুষ্কতা, খুশকি ও চুল ভাঙার সমস্যা এগুলো চলে যায় । শীতের এই শুষ্ক আবহাওয়ায় চুলকে পুষ্টি জোগায় এবং চুলকে সুস্থ রাখে । এর প্রাকৃতিক উপাদানগুলো আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে । এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতেও ভুমিকা রাখে ।

৩ । পেশির ব্যথা উপশম করে

এই শর্ষের তেলের উষ্ণতাদায়ক গুণাবলী শরীরের নমনীয়তা নিয়ে আসে এবং পেশির ব্যথা দূর করে। বিশেষ করে এই শীতের সময় পেশির ব্যথা কমাতে দারুন কার্যকর। এই তেলের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা দ্রুত ব্যথা কমানোতে কাজে আসে । যদি আপনি নিয়মিত শর্ষের তেল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার শরীরের পেশি থাকবে শিথিল, মিলবে প্রশান্তি ।

৪ । ত্বক নরম রাখে ও শুষ্কতা প্রতিরোধ করে

শর্ষের তেল ত্বককে দারুনভাবে আর্দ্র রাখে ফলে ত্বক থাকে কোমল এবং মসৃণ। শীতের এই শুষ্কতায় আমাদের ফেটে যাওয়া ত্বক দারুন ভাবে সারিয়ে তুলতে পারে এই শর্ষের তেল  । এর পুষ্টিকর উপাদান ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতাকে ধরে রাখতে ভুমিকা রাখে, ফলে ত্বক থাকে সুস্থ এবং প্রাণবন্ত।

৫ । চুলকানি কমায়

শর্ষের তেল আমাদের এই শীতের শুষ্কতাজনিত ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতেও কাজে দেয় । এটি ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে সস্তি দেয় এবং আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে মসৃণ ও মোহনীয় করে। এর ময়েশ্চারাইজিং গুণ শুষ্ক ও অস্বস্তিকর ত্বকের সমস্যা দূর করতে আমাদের দারুন ভাবে সাহায্য করে । এটিকে আপনি শীতকালে ত্বকের চুলকানির প্রাকৃতিক সমাধানও বলতে পারেন।

৬ । এটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর

মৃত ত্বকের কোষ দূর করার যে বিশেষ উপাদান সগুলোকেই বলা হয় ‘এক্সফোলিয়েটর’। শর্ষের তেল প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুন কাজ করে, ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে আলতোভাবে সরিয়ে দেয় । যার ফলে আমাদের ত্বক মসৃণ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতেও ভুমিকা আছে এই শর্ষের তেলের ।

৭ । ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে

য়ামাদের দেহে শর্ষের তেলের নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, যা ত্বককে নরম, মসৃণ ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এই তেল শীতকালের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে । শর্ষের তেল আমাদের ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখে এবং স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত ত্বক নিশ্চিত রাখে ।

৮ । ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে

শর্ষের তেলে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যেটা আমাদের ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে বাচিয়ে দেয় । শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে আমাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে যায় । শর্ষের তেল ত্বককে আমাদের সেই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৯ । রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীর উষ্ণ রাখে

এই শর্ষের তেল আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা ঠান্ডা থেকে আরাম পাই। এই তেলের উষ্ণতাদায়ক গুণবলী আমাদের দেহের রক্ত সঞ্চালনকে সক্রিয় করে, যেটা শীতে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।

১০ । এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ

শর্ষের তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর একটি উপাদান, যা ত্বকের গভীরে পুষ্টি জোগায় এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা নিশ্চিন্তে ধরে রাখে । এটি ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো করে, বিশেষত শীতকালে ত্বকের যত্নে অত্যন্ত ফলপ্রসূ । সুতরাং ত্বকের সুরক্ষায় এই তেল প্রাকৃতিক এবং কার্যকর সমাধান এটা আপনি নির্দিধায় বলতেই পারেন ।

তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।



No comments

Powered by Blogger.