ডিমের কুসুম খাবেন নাকি খাবেন না
আমাদের দেহের কোষ গঠন কারী প্রধান পুষ্টি উপাদান হচ্ছে আমিষ । আর এই আমিষের অন্যতম উৎস হচ্ছে ডিম । ডিম সহজলভ্য ও পুষ্টিকর হওয়ায় প্রায় সব সময় আমাদের খাদ্যতালিকায় এটি থাকে । নিয়মিত ডিম খেলে এটি আমাদের দেহের দৈনিক আমিষের চাহিদা পুরা করতে অবদান রাখে । ডিম হচ্ছে সুপার ফুড । এতে প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিউপাদানও প্রচুর থাকে । কিন্তু এই সুপার ফুড ডিম যখন আমরা খেতে যাই, তখন আমাদের মাথায় একটা প্রশ্ন উকি দেয়, প্রশ্নটা হচ্ছে ডিম কুসুমসহ খাওয়া ভালো, নাকি কুসুম ছাড়া খাওয়া ভালো ? আজকে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো । তো চলুন শুরু করা যাক ।
পুষ্টিবিদরা বলেন, একজন ব্যক্তি কুসুমসহ ডিম খাবেন, নাকি কুসুম ছাড়া ডিম খাবেন সেটা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির দেহিক অবস্থার উপর । একজন সুস্থ ব্যক্তি অনায়াসে কুসুমসহ ডিম খেতে পারেন, এতে কোনো বিধিনিষেধ নাই ।
ডিমের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে সাদা আর একতৃতীয়াংশ হচ্ছে হলুদ যেটাকে আমরা কুসুম বলে থাকি । এর সাদা অংশে থাকে প্রোটিন এবং হলুদ অংশে বা কুসুমে থাকে ফ্যাট, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল । এ ছাড়াও ডিমে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলেট, লুটেইন, জিয়াজেন্থিনসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ।
ডিমের কুসুমে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে আর এ জন্যেই এই কুসুম খাওয়া নিয়েই এতো ভাবনা । আমরা মনে করি ডিমের কুসুম খেলেই কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে । কিন্তু আসলে বিষয়টা এমন নয় । ডিমের কুসুমে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভালো কোলেস্টেরল, যেটা আমাদের হার্টের জন্য উপকারী । এ ছাড়াও কুসুমে থাকা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে । একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত একটি করে ডিম কুসুম সহ খেতে পারেন এতে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুকিও কমে যায় । এ ছাড়াও আপনি চাইলে একদিনে কুসুমসহ দুটি ডিম খেতে পারেন । পুষ্টিবিদরা এমনটাই জানাচ্ছেন ।
কখন ডিমের কুসুম খাওয়া আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকরঃ
বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া যায় ডিমের কুসুম আসলে আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় । যখন আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেতে যাবেন তখনই সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর । ডিমের স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সাথে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে, আর এইটাই হচ্ছে আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর । আবার ডিমের কুসুমে ভালো কোলেস্টেরল থাকলেও আপনি যদি সেটা বেশি বেশি করে খান তাহলে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে । আর রক্তে যখন কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে তখন সেটা হার্টের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে । আর এ জন্যেই নিয়মিত কুসুমসহ ডিম বেশি বেশি খেতে বারণ করা হয় । কিন্তু পরিমাণ মতো খেলে কোনো সমস্যা নাই বরং এতে আপনার দেহ সুস্থ থাকবে ।
পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন আপনার বয়স যখন ৪০ হবে, তখন সপ্তাহে চার দিন ডিম কুসুমসহ এবং তিন দিন ডিম কুসুম ছাড়াই খাবেন । এর বাইরে ইতোমধ্যেই যারা বিভিন্ন প্রকার অসুখে ভুগছেন তাদের জন্য কুসুম সহ ডিম খাওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আছে । যেমনঃ
১ । হার্টের রোগী হলেঃ রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, করোনারি আর্টারিতে প্লাক বা চর্মি জমানোর কারণে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করতে পারে । যার ফলে আমাদের করোনারী আর্টারি ডিজিজ হতে পারে । যেহেতু ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে, তাই এটি রক্তে মিশে আরোও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । এমনকি হার্টে খারাপ ফ্যাটও জমা হতে পারে । তাই হার্টের অসুখ থাকলে আপনার নিয়মিত ডিমের কুসুম না খাওয়াই হবে উত্তম ।
২ । ডায়াবেটিস থাকলেঃ ডিম রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে তাই ডায়াবেটিস রোগীও ডিম খেতে পারেন । যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও যথেষ্ট পরিমাণে বেশি আছে, তাদের জন্য ডিমের কুসুম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । তাই তাদের উচিৎ হবে তাদের দৈহিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কুসুম সহ ডিম খাওয়া ।
৩ । উচ্চ-কোলেস্টেরল রোগী হলেঃ সাধারণত যাদের দেহে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেশি থাকে তাদের কুসুমসহ ডিম কম খেতে বলা হয় । যারা উচ্চ কোলেস্টেরল ধারী, তারা যদি ডিম তেলে ভেজে খান বা মাখনে বেক করে খান, তাহলে তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা আরোও বৃদ্ধি পেয়ে যায় । নিয়মিত কুসুমসহ ডিম খেলে উচ্চ-কোলেস্টেরল রোগীর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে । তাই উচ্চ-কোলেস্টেরল ধারী যারা আছেন, তারা চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে ডিম খাওয়া চালিয়ে যাবেন ।
৪ । কিডনি রোগী হলেঃ যারা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদের কুসুমসহ ডিম খাওয়া নির্ভর করে তাদের দৈহিক অবস্থার উপর । কিডনি রোগে যারা ভুগছেন তাদের সাধারণত কুসুমসহ ডিম খেতে নিষেধ করা হয় । তবে যাদের ডায়ালাইসিস চলে তাদের কুসুমসহ ডিম খেতে বলা হয়ে থাকে । সুতরাং আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে ডিম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।
তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোনো এপিসোডে । আশা করছি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিয়ে শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক-আমিন ।
Post a Comment