ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট বাড়াবে যেসব খাবার
ছাত্র জনতার গণ অভুথ্যানের পর দেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছে । এর সাথে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়তে চাইছে ডেঙ্গু । এই ডেঙ্গু এখন শুধু শহরেই নাই গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে । ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সাধারণত একজন রোগীর রক্তে একটি উপাদান কমতে থাকে । যেটিকে বলা হয় প্লাটিলেট । একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের দেহে প্রতি ১০০ মিলি লিটার রক্তে প্লাটিলেট থাকে এক লাক্ষ পঞ্চাশ হাজার থেকে চার লাক্ষ । এই প্লাটিলেট যখন আমাদের দেহে কমে যায় তখন দেহে রক্ত ক্ষরণ ছাড়াও নানান স্বাস্থ্যঝুকি দেখা দিতে পারে ।
সম্মানিত সুধি, আশা করছি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন । আজকের লেখাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আপনি যে সমস্ত খাবার খেয়ে আপনার রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে পারেন সেটি নিয়ে আলাপ করবো । তো চলুন শুরু করা যাক ।
আপনার রক্তে দ্রুত প্লাটিলেট কমে গেলে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন এনে আপনি আপনার রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা আগের মতো ফিরিয়ে নিয়ে আনতে পারেন । ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে যে খাবার গুলো আপনি খাবেনঃ
১ । পেঁপে ও পেঁপে পাতাঃ
এক গবেষনায় উঠে এসেছে পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমান দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । এ ছাড়াও পাকা পেঁপের জুস রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ খুব তাড়াতাড়ি বাড়াতে পারে । এ জন্যে আপনি ডেঙ্গু রোগীকে প্রতিদিন সতেজ পেঁপে পাতার রস এক চামচ করে দুবেলা খাওয়াতে পারেন । এর পাশাপাশি আপনি ডেঙ্গু রোগীকে পাকা পেঁপের জুসও খাওয়াতে পারেন ।
২ । মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজঃ মিষ্টি কুমড়ায় থাকে প্লাটিলেট তৈরীর উপাদান ভিটামিন এ । তাই রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে আপনি নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন । এর সাথে সাথে আপনি মিষ্টি কুমড়া বীজও খেতে পারেন । কেননা এটি মিষ্টি কুমড়ার মতোই প্লাটিলেট বাড়াতে পারে । তাই ডেঙ্গু রোগীকে নিয়মিত মিষ্ট কুমড়া বা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়াতে থাকুন ।
৩ । লেবুর রসঃ লেবুর রসে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি । যেটা ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । শুধু তাই নয় এতে থাকা ভিটিমিন সি রক্তে প্লাটিলেট ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে । সেই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় । তাই ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবুর সরবত খাওয়াতে পারেন ।
৪ । আমলকীঃ আমলকীতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । তাই আপনি যদি নিয়মিত আমলকী খাওয়া চালিয়ে যান তাহলে ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারেন । পারেন আপনার রোগীকে রোগ প্রিতিরোধী করে গড়ে তুলতে ।
৫ । অ্যালোভেরার রসঃ অ্যালোভেরার আছে রক্তকে বিশুদ্ধ করার গুণাবলী । তা ছাড়াও জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধেও অ্যালোভেরার আছে বিশেষ ক্ষমতা । তাই ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন ।
৬ । ডালিমঃ ডালিম একটি পুষ্টিকর সুস্বাদু ফল । এর রস ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে দারুন সাহায্য করে, কারণ এতে আছে প্রচুর আয়রন । এ ছাড়াও ডালিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন আমাদের দুর্বলতা কাটাতেও সাহায্য করে । তবে ভালো ফল পেতে চাইলে রোগীকে দৈনিক ১৫০ মিলি লিটার পরিমাণ ডালিমের জুস খাওয়াতে পারেন এবং এই প্রক্রিয়া দুই সপ্তাহ চালু রাখুন ।
৭ । বেশি পরিমানে পানি ও তরল খাবারঃ আক্রান্ত রোগীকে দৈনিক কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করাতে হবে । জ্বর হলে সাধারণত কোন কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না । তাই পানির চাহিদা মেটাতে হোম মেড জুস এবং ডাবের পানি খাওয়াতে থাকুন । বিভিন্ন ফলের রসে ভিটামিন সি থাকে । তাই রোগীকে মাল্টা, কললা, লেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরী, পেপে এবং ডালিমের জুস খেতে দিন । এগুলো রোগীর রক্তে প্লাটিলেট বাড়ার পাশপাশি মুখের রুচিও বৃদ্ধি করে । আপনি রোগীকে ডাবও খাওয়াতে পারেন । কারণ এতে আছে খনিজ বা ইলেক্ট্রোলাইট যা ডেঙ্গু রোগীর জন্য খুবই উপকারী ।
এ গুলো ছাড়াও আরো যে সব খাবার খাবেনঃ
১ । শাক-সবজিঃ গাজর, শসা, টমেটো ইত্যাদি একত্রে সবজি রান্না করে ডেঙ্গু রোগীকে খাওয়াতে পারেন । এই জাতীয় সবজিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে ফলে দেহে পানির অভাব দূর হয়ে যায় । এ ছাড়াও অন্য সবজির মধ্যে ব্রকলী খেতে পারেন । কেননা এতে ভিটামিন কে বিদ্যমান, যেটা ডেঙ্গু রোগীর রক্তপাতের ঝুঁকি কমিয়ে নিয়ে আসে ।
২ । সবজির স্যুপঃ ডেঙ্গু রোগীকে দৈনিক বিভিন্ন রকমের স্যুপ, যেমন সবজির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ, চিকেন স্যুপ কিংবা কর্ন স্যুপ দিতে পারেন । এতে রোগীর দেহে পানির ঘাটতি পুরা হবে এবং রোগীর দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবে । ডেঙ্গু রোগীকে সবজির পাশাপাশি আপনি নরম জাউ ভাত খাওয়াতে পারেন ।
৩ । মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুনঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হজম ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং বমি ও পেটে ব্যাথা হতে পারে । রোগীর লিভারে অস্বাভাবিকতা তৈরী হতে পারে, ফলে রক্তে এসজিপিটির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে । তাই রোগীকে অতিরিক্ত মসলা এবং চর্বি জাতীয় খাবার না দেয়াটাই হবে উত্তম । তবে খাবারে যথেষ্ট প্রোটিন বা আমিষ থাকা আবশ্যক । এই জন্য আমিষ পেতে রোগীকে আপনি মাছ, মুরগী, দুধ ও ডিম এগুলো দিয়ে খাবার তৈরী করে দিতে পারেন ।
ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত রোগীর রক্তে অধিকাংশ সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুতই কমে যায় । তাই যে খাবার গুলো রোগীর প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে যাহায্য করে সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে । অনেক সময় নানান ভাইরাস জনিত জ্বরের কারণেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে । তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন । দরকার পড়লে রোগীকে হাস্পাতালে শিফট করুন । রোগীর খাবার দাবারে বিশেষ সচেতন হোন এবং রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখুন । এ ছাড়াও নিয়মিত মশারী টাঙ্গিয়ে নিন, মশার বিস্তার রোধে যা যা করা দরকার সেগুলো করে ডেঙ্গু বিস্তার রোধের জন্য নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন ।
তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোনো এপিসোডে । আশা করছি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিয়ে শেয়ার করে সবাইকে শোনার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক-আমিন ।
Post a Comment