হজমশক্তি বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
খাবার খাচ্ছি উচ্চ পুষ্টিমানের কিন্তু স্বাস্থ্য দিন দিন আরোও খারাপের দিকে যাচ্ছে । এরকম সমস্যা হয়তো আপনারও কখনোও হয়েছে । হতেই পারে, যদি আপনার খাবার সঠিকভাবে হজম না হয়, নানান রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে । ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, অপুষ্টিসহ আরোও নানান সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন । আর এতো এতো সমস্যা দেখা দিলে কি করে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে । সো স্বাস্থ্যের উন্নতি চাইলে আপনার খাবারটাও ভালোভাবে হজম করতে হবে । আর এ জন্যেই সঠিকভাবে খাবার হজম হওয়া এতো গুরুত্বপূর্ণ ।
সম্মানিত সুধি, আজকে আমরা এই হজম শক্তি বাড়ানোর ঘরোয়া উপায় নিয়েই আলাপ করবো । তো চলুন শুরু করা যাক ।
যেহেতু আজকে আমরা হজমশক্তি বাড়ানো নিয়ে আলাপ করছি, তাই একটা কথা শেয়ার করা জরুরী । ব্যক্তিভেদে হজম ক্ষমতা ভিন্ন হতে পারে । এটা মাথায় রাখতে হবে । স্রষ্টা একেক জনকে একেক রকমভাবে সৃষ্টি করেছেন । অনেকের হয়তো হজমক্ষমতা একটু বেশীই হতে পারে । তবে ঘাবরাবার কিছু নাই । যাদের খাবার ঠিকঠাক হজম হয়না, তারা যদি উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, নিয়ম মেনে ব্যায়াম এবং কিছু নিয়ম ফলো করেন, তাহলে আপনি আপনার হজমশক্তি বাড়িয়ে নিতে পারেন । আসুন এজন্য আপনাকে কি কি কাজ করতে হবে সেগুলো নিয়ে আলাপ করি ঃ
১ । আপনি যখন খাবার খাবেন, তখন আপনার খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন । আপনি যত ভালোভাবে আপনার খাবার চিবিয়ে খাবেন, ততো ভালোভাবে আপনার পাচকরস নির্গমন হবে । ফলে এই পাচকরস আপনার খাবার ভালোভাবে হজম করতে সাহায্য করবে ।
২ । আপনার খাবারের সঙ্গে লেবু রাখুন । এই লেবু খুব সহজেই আপনার খাবার হজমে সাহায্য করবে । ইচ্ছে করলে আপনি খাবার পর লেবুপানি খেতে পারেন ।
৩ । নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে । এই ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার আমাদের হজমে সাহয্য করে । এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করা গুরত্ব মনে করছি । আমরা অনেকেই ল্যাকটোজেন অসহিষ্ণুতার কারণে দুধ খাওয়া একবারেই ছেড়া দেই । এ ক্ষেত্রে আপনি দুধ খাওয়া পুরো ছেড়ে না দিয়ে, অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস চালিয়ে যেতে পারেন । এতেও যদি আপনার সমস্যা হয়, তাহলে ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ আপনি খেতে পারেন।
এ ছাড়াও দুধের বিকল্প হিসেবে আপনি দই খেতে পারেন। কারণ হজমশক্তি বাড়াতে দই খুবই সাহায্য করে । দইয়ে অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে। সুতরাং এটি খেলে আপনার ক্যালসিয়াম ও প্রোটনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি আপনার হজমেও সাহায্য করবে ।
৪ । দিনে দু'বার গ্রিন টি বা পুদিনাপাতার চা খেতে পারেন । কেননা এর ভেতর আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট । যেটা আপনার খাবার হজমে সাহায্য করবে ।
৫ । আপনার খাবার তালিকায় রাখুন আঁশযুক্ত খাবার । এই আঁশযুক্ত খাবার সহজেই পানি শোষণ করে, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে । আরোও খেতে পারেন নিয়মিত শাকসবজি, ফল, সালাদ, চিয়া সিড, ইসবগুল । এ ছাড়াও পানির পরিমাণ বেশি আছে এমন ফল ও সবজি খাবার তালিকায় বেশি বেশি রাখতে পারেন । যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, টমেটো, লাউ ইত্যাদি ।
৬ । দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে । কারণ পানি ছাড়া কোনো খাবারই ঠিকঠাক ভাবে হজম হয় না।। তবে খাওয়ার আগে এবং খাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত পানি পান করা মোটেই উচিৎ নয় । কারব এতে বদহজম হতে পারে ।
৭ । আপনার রাতের খাবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে খেয়ে নেয়াই উত্তম । গভীর রাতে খাবার খেতে যাবেন না, কিংবা খেয়েই ঘুমাতে যাবেন না । আপনি ঘুমানোর অন্তত ২ ঘন্টা পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে নিবেন ।
৮ । আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করুন । নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার খাবার সঠিকভাবে হজম হবে । দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিৎ । সেটা হতে পারে হাঁটাহাঁটি, জগিং কিংবা সাইক্লিং করার চেষ্টা । বিশেষ করে পেটে চাপ পড়ে, এমন ব্যায়াম করুন । এতে আপনার হজম ত্বরান্বিত হবে । এর পাশাপাশি আপনাকে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামও করতে হবে । এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে ।
৯ । দিনে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ভালো ঘুমাতে হবে । রাত্রি জাগার অভ্যাস থাকলে সেটা বাদ দিতে হবে । সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়তে হবে। কারণ এতে হজমশক্তির উন্নতি ঘটে ।
১০ । মানসিক ভাবে ফুরুফুরে থাকতে । কোনো রকম মানসিক চাপ নেয়া যাবে না ।
১১ । খাবার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার তালিকায় অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া না থাকে ।
১২ । যে কোনো অবস্থাতেই ধুমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।
শেষে একটা কথা বলি কোনো অবস্থাতেই ঘাবরে যাবেন না । স্রষ্টার উপর ভরসা রাখুন । আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান ।
তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোনো এপিসোডে । আশা করছি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিয়ে শেয়ার করে সবাইকে শোনার সুযোগ করে দিবেন ।আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক-আমিন ।
Post a Comment