সহজলভ্য এই ৮ খাবার থেকে পাবেন উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম
আমাদের দেহের হাড় এবং দাতের প্রায় পুরোটাই ক্যালসিয়াম । অর্থাৎ আমাদের শরীরের প্রায় সমস্ত ক্যালসিয়াম হাড় ও দাতে জমা হয় । যার অর্থ দ্বাড়ায় হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করে এই ক্যালসিয়াম । এ ছাড়াও আমাদের দেহের পেশি মুভমেন্ট, স্নায়ুবিক কাজ, রক্ত সঞ্চালন, হরমন নির্গমণ আরোও নানান কাজ করে এই ক্যালসিয়াম । তবে এই ক্যালসিয়াম আমাদের দেহে শোষণের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরী ।
এক কথায় আমাদের দেহের সুস্থতায় ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরী । উঠতি বয়সে হাড় গঠনে ক্যালসিয়াম যেমন অতি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বুড়ো বয়সে সার্বিক সুস্থতার জন্যও প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করাটাও জরুরী । আগেই বলেছি আমাদের হাড়ের পুরোটাই ক্যালসিয়াম তাই এর ঘাটতি হলে হাড় ক্ষয় হতে পারে, হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে । তৈরী হতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা । আর এ জন্যই আমাদের নিয়মিত ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন ? একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার । এই ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস হচ্চে দুধ । এ ছাড়াও কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, খেজুর, কিশমিশ, চীনাবাদাম, লালশাক, পালংশাক, কাঁকরোল ইত্যাদিতেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় । তবে কোন খাবার কি পরিমাণ খেলে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মিটবে সেটা জানা অত্যন্ত জরুরী ।
আসুন সহজলভ্য যে খাবার গুলোতে আমারা আমাদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারি সেগুলো নিয়ে আলাপ করি । শুধু খাবার নিয়েই আলাপ না কি পরিমাণ প্রতিদিন খেলে আমাদে দৈনন্দিন চাহিদা মিটবে সেটাও বিস্তারিত বলছিঃ
১ । দুধ ও দুধের তৈরী খাবারঃ আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে আপনাকে প্রতিদিন ২২০ থেকে ২৫০ মিলি লিটার দুধ খেতে হবে । এজন্য আপনি নরমাল দুধের পরিবর্তে সম পরিমান দুধ দিয়ে তৈরী কোনো খাবার খেতে পারেন । আপনি মিল্কশেক কিংবা স্মুদিও খেতে পারেন । তবে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন দুধ চা কিংবা দুধ দিয়ে তৈরী কোনো কফি খেলে সেটা আপনার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরা করবে না । কারণ দুধ, চা বা কফির সাথে মিশে গেলে দুধ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে ।
২ । ডিমঃ আপনি যদি বড় সাইজের একটি ডিম প্রতিদিন খান তাহলে আপনার দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা মিটে যাবে । তবে দেশি মুরগীর ডিম খেলে আপনার একটি ডিমে নাও হতে পারে । তাই আপনি এ ক্ষেত্রে দুটো ডিম খাবেন ।
৩ । খেজুরঃ আপনার দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন ছোট আকারের দুটো খেজুর খেতে হবে । বড় হলে সেটা আপনি একটা খেতে পারেন ।
৪ । লাল শাক এবং পালংশাকঃ পালংশাক বা লাল শাক থেকে আপনি পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে চাইলে, আপনাকে রান্না করা শাক দেড় থেকে দুই টেবিল চামুচ পরিমাণ খেতে হবে ।
৫ । চীনা বাদামঃ যদি আপনি প্রতিদিন খোসা ফেলে দেওয়া ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম চীনা বাদাম খান তাহলে আপনি আপনার দৈনন্দিন চাহিদার পূরণ ঘটাতে পারেন । তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বাদামের লালচে আবারণ কখনোও ফেলে দিলে হবে না।
৬ । কাঁকরোলঃ আপনার দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে এজন্য আপনাকে প্রতিদিন একটা থেকে দেড়টা কাঁকরোল খেতে হবে । তবে একটা বিড়ম্বনা আছে । যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কাঁকরোল বেশি খাওয়া ঠিক হবে না । কারণ এতে ক্যালসিয়াম থাকলেও এতে আছে প্রচুর শর্করা । তাই তাদের উচিত হবে কাঁকরোল না খেয়ে বরং অন্য উৎস থেকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা ।
৭ । কিশমিশঃ আপনার দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে আপনি খেতে পারেন এক চা–চামচ শুকনা কিশমিশ । এর সাথে যদি আপনি একটা খেজুর এবং কিছু চীনা বাদাম মেশাতে পারেন তাহলে আরোও ভালো ফল আপনি পেতে পারেন । কারণ এই তিনটিই ক্যালসিয়ামের উৎস ।
৮ । কাটা-সমৃদ্ধ ছোট মাছঃ আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরা করেত চান, তাহলে আপনাকে কাচকি মাছ খেতে হবে রোজ ১০০ গ্রাম । ট্যাংরা, মলা -ঢ্যালা মাছ খেতে চাইলে খেতে হবে সাত-আটটি মাছ । রান্না করার পর যদি আপনার কাচকি মাছের পরিমাণ নির্ধারণে সমস্যা মনে করেন, তাহলে আপনি রান্না করার পর কাচকি মাছ দেড় টেবিল চামচ পরিমাণ খেয়ে নিবেন । তাহলেই আপনার দৈনন্দিন চাহিদা মিটে যাবে ।
শেষে একটি কথা বলি কেউ যদি প্রাণীজ উৎস বাদ দিয়ে শুধু উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পুরা করতে চান, তাহলে একটু সতর্ক হয়ে খাওয়ার পরিমানটা সমন্বয় করে নিতে হবে ।
তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোনো এপিসোডে । আশা করছি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিয়ে শেয়ার করে সবাইকে শোনার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক-আমিন ।
Post a Comment