ডায়াবেটিসে কলা খাওয়া যাবে কি ?

কলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল । এতে কোনো সন্দেহ নাই । কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কলা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ । কলাতে এমন কত গুলো উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস দ্রুতই বাড়িয়ে দিতে পারে । আবার কিছু এমন উপাদান আছে যে গুলো সহজেই ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে বাধা দেয় । যে উপাদান আমাদের ব্লাড সুগার বাড়তে সাহায্য করে তা হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট । এবং এই কার্বোহাইড্রেট কলাতে বিদ্যমান । অন্য দিকে কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে । যেটা ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা সহজেই বাড়তে দেয় না ।

কাচা কলাতে আবার কিছু চমৎকার উপাদান আছে । এই স্পেশাল উপাদানটি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ । যেটি আমাদের ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে চমৎকার সাহায্য করে । একদিকে কলার উপাদান ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করছে, আবার অন্য দিকে কলার কিছু উপাদান ডায়াবেটিস কমাতে অবদান রাখছে । এখন আমরা কি করবো ? আমরা কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কলা খাওয়া চালিয়ে যাবো ? নাকি কলা খাওয়া ছেড়ে দেব ।

বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয় সে জন্য আসুন দেখি কোন কলা ব্লাড গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে এবং কতটি খেতে হবে সেটা জানার চেষ্টা করি । একটি মাঝারী সাইজের কলা গড়পড়তা সাধারণত ২৭ গ্রামের হয়ে থাকে । এর মধ্যে ১৪ গ্রাম হয়ে থাকে সুগার । কলা আমাদের যে ক্যালরী দিয়ে থাকে তার ৯০ শতাংশই সুগার থেকে পাওয়া । তাই কলা খেলে খুব সহজেই আমাদের ব্লাড গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু কলাতে যেমন ১৪ গ্রাম সুগার আছে, অন্যদিকে এতে ৩ গ্রাম ফাইবারও থাকে । এই ফাইবার আবার ব্লাড সুগার কমাতে দারুন কার্যকর । ফাইবার সুগারের শোষনকে কমিয়ে নিয়ে আসে । আবার হজমের গতিকেও কমিয়ে দেয় । যার ফলে ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে । 

কাচা কলাতে ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের আরোও একটি উপাদান থাকে । যেটি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ । এটি হচ্ছে দীর্ঘ চেইন গ্লুকোজ । যেটা পৌষ্টিকতন্ত্রের উপরের অংশে পরিপাক হয় না । অর্থাৎ এই রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ পৌষ্টিকতন্ত্রের উপরের অংশে ফাইবারের মতো কাজ করে । ফলে ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে । এর বাইরে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ পৌষ্টিকতন্ত্রের নীচের অংশের বন্ধুভাবাপন্ন ব্যকটেরিয়াকে খাবার সরবরাহ করে থাকে । এটা মেটাবোলিক হেলথ ভালো রাখার পাশাপাশি ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে করে ।

এ থেকে বোঝা যায় কলাতে ভালো এবং খারাপ দুধরণের কার্বোহাইড্রেটই থাকে । তাই কলা ব্লাড সুগার কমাতে ভালো নাকি মন্দ, সেটা জানার জন্য কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জানা একটি ভালো উপায় । আসুন দেখি কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কেমন? কলার গি আই বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪২ থেকে ৬২ । অর্থাৎ এটি কম থেকে মাঝারী মানের । এটি আবার নির্ভর করে কলা কতটা পাকা সেটার উপর । কাচা কলার জি আই বা গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম । কলা যতই পাকবে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও ততই বেড়ে যাবে । তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে কলা সাহায্য করতেই পারে ।

আসুন এখন আমরা দেখি কোন কলা ব্লাড গ্লুকোজ কমাতে সব থেকে ভালো । কলাতে থাকা তিনটি উপাদান ব্লাড সুগারের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে । একটি হচ্ছে সুগার, যা ব্লাড গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয় । দুই হচ্ছে ফাইবার আর তিন হচ্ছে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ । এই দুই এবং তিন নাম্বার উপাদানটি ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে । কলা যত কাঁচা থাকবে ততো এর ফাইবার এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ বেশি থাকবে এবং ততোই সুগার নিয়ন্ত্রণ করবে  । পক্ষান্তরে কলা যত পাকা হবে ততোই এর সুগার বেড়ে যাবে এবং ফাইবার এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ কমতে থাকবে । তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে খুব বেশি পাকা কলা না খাওয়াই ভালো হবে ।

কাঁচা কলাকে আপনি সবজি হিসাবে খেতে পারেন । আর কলা যদি ফল হিসাবে খেতে চান তাহলে অত্যধিক পাকা কলা এড়িয়া চলাই আপনার জন্য উত্তম হবে । 

ব্লাড গ্লুকোজ কমাতে আপনি কতটা কলা খেতে পারেন ? ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কলা শুধু পাকার উপর নির্ভর করে না, এর গ্লাইসেমিক লোড কেমন সেটার উপরও নির্ভর করে । তাই কত পাকা আপনি খাচ্ছেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কলা ক'টা খাচ্ছেন সেটাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ । যে খাবারের গ্লাইসেমিক লোড যত কম সেই খাবার ততটাই ডয়াবেটিস বান্ধব । কলা ছোট মাঝারী এবং বড় সাইজের হয়ে থাকে । ছোট একটি কলার ওজন হয়ে থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম । মাঝারী সাইজের কলার ওজন হয়ে থাকে প্রায় ২৭ গ্রাম এবং বড় সাইজের কলার ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৩৫ গ্রাম । 

কলার সাইজ অনুযায়ী এর গ্লাইসেমিক লোড হয়ে থাকে ১১ থেকে ২২ । যে খাবারের গ্লাইসেমিক লোড ১০ এর কম সেই খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে উত্তম । ১১ থেকে ১৯ হলে সেটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঝারী আর যদি ২০ এর বেশি হয় তাহলে সেটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই বাজে । তাই আপনি যদি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে ছোট সাইজের একটি কলা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন । তবে কাঁচা কলা সবজি হিসাবে আপনি বেশিও খেতে পারেন । 

ও হ্যাঁ পাকা মাঝারী এবং বড় সাইজের কলা আপনার এড়িয়ে যাওয়া হবে সব থেকে নিরাপদ, যদি আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান । একটি কথা বলে রাখা ভালো, যদিও ছোট একটি কলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে, তবুও যখন আপনি ছোট সাইজের একটি কলা খাবেন, তখন এর সাথে অন্য খাবারও খাবার চেষ্টা করবেন । যেমন বাদাম , দই ইত্যাদি যেগুলো আপনার কলার কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক এবং শোষনকে বাধাগ্রস্থ করবে । ফলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে । তবে কলা ছোট সাইজের হলেও বেশি পাকা কলা না খাওয়াটাই হবে আপনার জন্য বেটার । 

তো এই ছিলো আজকের মতো । লেখাটা ভালো লাগলে একটা লাইক দিবেন আর বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক -আমিন ।




No comments

Powered by Blogger.