লবঙ্গ খাওয়ার দশটি আশ্চর্যজনক উপকারিতা
লবঙ্গ আমাদের রান্না ঘরের অতি পরিচিত একটি কমন মসলা । প্রায় প্রত্যেকের বাসায় রান্না ঘরে এই মসালা পাওয়া যায় । আমরা সাধারণত এটি মসলা হিসাবে রান্নার সাধ বাড়াতে ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, এর আছে বিস্ময়কর উপকারী ক্ষমতা । এই লবঙ্গের আছে লিভারকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা । আপনার দেহে যদি ক্যানসার জীবাণু থাকে তাহলে সেই ক্যানসার জীবাণুর সাথে লড়াই করে এই লবঙ্গ । এর আছে আপনার সেক্সুয়াল পাওয়ার বৃদ্ধি করার ক্ষমতা, আছে শরীরের ইনফ্লামেশন কমানোর ক্ষমতা । এ ছাড়াও দাঁত ও দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন এবং দাঁতের তীব্র যন্ত্রণা কমাতে পারে এই লবঙ্গ । এ গুলো ছাড়াও আরোও হাজারো উপকারিতা আছে এই রান্না ঘরের অতি পরিচিত মসলা লবঙ্গের ।
আপনি যদি প্রতিদিন দুইটি করে লবঙ্গ খান, তাহলে এই দুইটি লবঙ্গ আপনার দেহে কি কি পরিবর্তন আনবে বা আনতে পারে ? এইটা নিয়েই আজকের লেখাতে বিস্তারিত আলাপ করবো । এ ছাড়াও আমরা আজকের লেখাতে জানবো লবঙ্গের উপকারীতা এবং লবঙ্গ কি কি নিয়মে খেলে মিলবে এই লবঙ্গের সর্বোচ্চ মেডিসিনাল বেনিফিটস এবং আরোও জানবো এই লবঙ্গ খেলে আমাদের কি কি সাইড ইফেক্ট হতে পারে ?
আপনি যদি নিয়মিত দীর্ঘদিন থেকে হজম বা বদহজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন । তাহলে আপনি নিয়মিত করে দুটি লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস ঘড়ে তুলতে পারেন । কেননা এতে আছে ইউজেনিক(Eugenic acid) এসিড এবং ক্রাটাগোলিক এসিড (Crategolic
acid) । এই ইউজেনিক এসিড এবং ক্রাটাগোলিক এসিড আপনার ডাইজেস্টিভ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ডাইজেস্টিভ এনজাইম গুলোর সেক্রেশন বাড়িয়ে দেয় । এর ফলে আপনি যে খাবার গুলো খান সেগুলো অতি সহজেই হজম হয়ে যায় ।
এ ছাড়াও আমাদের যে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সিস্টেম রয়েছে । সেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনালের ইনারওয়ালের মধ্যে যে পাতলা আস্তরণ থাকে, সেটি খুব রিলাক্স করে দেয়, ফলে আমাদের সমস্ত খাবার খুব সহজেই হজম হয়ে যায় । এতে আমাদের পেটে ব্যাথা, গা বমি ভাব বা বমি হওয়ার মতো যে সমস্যা, সেগুলি থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারি ।
এই লবঙ্গের মধ্যে আছে প্রচুর অ্যাণ্টিঅক্সিডেন্ট । যে অ্যাণ্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অর্গান গুলিকে ফ্রিরেডিকেলের কবল থেকে রক্ষা করে । বিশেষ করে আমাদের লিভারকে । আমাদের দেহে যখন মেটাবলিজম হয়, মেটাবলিজম হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের দেহে ফ্রি র্যাডিকেলের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে আমাদের দেহে অ্যাণ্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা কমে যেতে থাকে । আপনি যদি নিয়মিত ভাবে লবঙ্গ খেতে থাকেন, তাহলে লিভারে থাকা হেপাটোপ্রটেক্টিভ প্রপারটিস আপনার লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে । আপনার যে কোনো প্রকার লিভারের সমস্যা, যেমন লিভার সিরোসিস বা ফ্যাটিলিভারের মতো সমস্যা গুলোও খুব সহজেই হতে পারে না ।
নিয়ম মেনে যদি আপনি এই লবঙ্গ খেয়ে যান, তাহলে আপনার শরীরে যদি ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের মতো সমস্যা থাকে সেটি ধিরে ধিরে কমিয়ে নিয়ে আসে । ফলে আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি দারুন ভুমিকা রাখবে । এর সাথে সাথে এই লবঙ্গ আপনার দেহে কার্বোহাইড্রেটের শোষণকেও বাধাগ্রস্থ করে বা কমিয়ে দেয় । তাই আমরা যখন খাই, তখন আমাদের দেহে হটাৎ করে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা, সেই হটাৎ করে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতাকে বাধাগ্রস্থ করে দেয় । ফলে এভাবে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । সেই সাথে এই লবঙ্গের নির্যাস আপনার দেহে ইনসুলিনের সেনসিভিটি বাড়াতেও সাহায্য করে । আপনার শরীরের যখন ইনসুলিনের সেনসিভিটি বেড়ে যায়, তখন কম পরিমাণ ইনসুলিন বেশি মাত্রায় গ্লুকোজকে ভেঙ্গে এনার্জি বাড়িয়ে শরীরের কোষে কোষে পৌছে দিতে পারে । এর ফলে ডায়াবেটিসের মতো জটিল সমস্যাও আপনাকে সহজে স্পর্শ করতে পারে না ।
লবঙ্গের ভেতর ইউজিনল(Eugenol), ফ্লাভোন্স(Flavone) এবং আইসোফ্লাভোন্সের(Isoflavones) মতো হাইড্রোঅ্যালকোহলিক নির্যাস বিদ্যামান । তাই আপনি যদি নিয়মিত লবঙ্গ খেতে পারেন, তাহলে আপনার হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি স্বাভাবিক থাকে বা ঠিকঠাক থাকে এবং সেই সাথে হাড়ের ভেতর যে সমস্ত খনিজ পদার্থ থাকে, সেগুলোর ভারসাম্য ঠিক রাখে । এর বাইরে লবঙ্গের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ । এই ম্যাঙ্গানিজ আমাদের তরুনাস্তি বা কার্টিলেজের কানেক্টিভ টিসু বা যোযক কলাগুলোকে সংশ্লেষিত করতে সাহায্য করে । এর মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণকে বারিয়ে দেয় । আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের এবজর্বশন বা শোষণ বেড়ে গেলে, আমাদের হাড় এবং মাংসপেশি মজবুত হয়ে ওঠে । এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা আমাদের কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেয় । এর মধ্যে আরোও আছে ভিটামিন K । এই ভিটামিন কে আপনার হাড়ে থাকা ওস্টিওক্লাস্ট সেলের এক্টিভিটি রেগুলেট করতে সাহায্য করে । সুতরাং আপনি আপনার হাড়কে মজবুত এবং সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্য মেনুতে নিয়মিত লবঙ্গ রাখতে পারেন ।
লবঙ্গের উপকারিতার মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য একটি উপকারিতা হচ্ছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিস বা এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিস । এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিস থাকার কারণে এটি যে কোনো ইনফেকশন থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে । ইনফেকশন জনিত কারণে যে সমস্ত রোগ বালাই আমাদের এটাক করে, এই লবঙ্গ খাওয়া আমাদের সেই সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকেও নিরাপদে রাখতে সাহায্য করে । এগুলোর সাথে সাথে আপনার মুখের ভেতর যে কোনো ইনফেকশন থেকেও আপনাকে রক্ষা করতে পারে । যেমন পাইরিয়া বা এই জাতীয় দাতের মাড়ির যে কোনো ইনফেকশন থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিবে এই লবঙ্গ । এ ছাড়াও আপনার দাতের মাড়িতে ব্যাথা হলে, আপনি ব্যাথার স্থানে এই লবঙ্গ তেল লাগালে দ্রুতই আপনি বেশ আরাম পেতে শুরু করবেন । লবঙ্গ তেল তৎক্ষণাৎ না পেলে একটি আস্ত লবঙ্গ থেতলে নিয়ে ব্যাথার স্থানে লাগাতে পারেন । এতেও আপনার ব্যাথা কমে যাবে ।
লবঙ্গ আমাদের শরীরে কামোদ্দীপক হিসাবে কাজ করে । এক মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, একজন পুরুষ যদি নিয়মিত লবঙ্গ খায়, তাহলে তার টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । যদি কোনো পুরুষের সেক্সুয়াল ডিস্ফাংশনের মতো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে এই লবঙ্গ নিয়মিত সেবন সেই পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, তার সেক্সুয়াল ডিস্ফাংশনের মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । সেই পুরুষের সহবাসকে করে দীর্ঘায়িত । সুতরাং আপনি যদি ইরেক্টাইল দিস্ফাংশ্নের মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত দুইটি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন । এতে আপনি সহবাসে দ্রুত বীর্য স্খলন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।
বিজ্ঞানীদের গবেষনায় জানা যায়, আপনি যদি নিয়মিত লবঙ্গ থেয়ে থাকেন, তাহলে লবঙ্গের মধ্যে থাকা মেডিসিনাল প্রপার্টিস, যেমন ইউজিনল(Eugenol) আপনার দেহের কোলন ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, অভারিয়ান ক্যানসার এবং লিভার ক্যানসাররের মতো সমস্যা থেকে আপনাকে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে । সেই সাথে আপনার দেহে কোনো প্রকার টিউমার ফর্মেশনে বাধা দিয়ে থাকে । সুতরাং আপনি নিয়মিত দুটি করে লবঙ্গ খেলে আপনার দেহকে ক্যানসার জীবাণুর সাথে সংগ্রাম করতে সাহায্য করে ।
আপনার মাথার যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনেও লবঙ্গ দারুন কার্যকরী । যখনই আপনার মাথার যন্ত্রনা বা মাইগ্রেন হোক না কেন, আপনি কয়েকটি লবঙ্গ থেতলে নিয়ে, একটি রুমালে সেগুলোর একটি পুটলি বানিয়ে নিন । এবার এই পুটলিটা আপনার নাকের কাছে নিয়ে শ্বাস দিয়ে এর গন্ধ বা ঘ্রান টেনে নিন, যতক্ষণ না আপনার মাথার যন্ত্রণা যাচ্ছে । এভাবে কিছুক্ষণ ঘ্রান টানতে থাকলে আপনার মাইগ্রেনের ব্যাথা দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ । কেননা এতে আছে প্রচুর পেইন রিলিভিং প্রপার্টিস ।
আসুন এখন লবঙ্গ খাওয়ার সিস্টেম সম্পর্কে জেনে নেই । অর্থাৎ কিভাবে আমরা এই লবঙ্গ খেলে সর্বোচ্চ আউটপুট পাবো বা ফলাফল পাবো । আমরা সাধারণত লবঙ্গকে রান্নায় মসলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি । আপনি এভাবে লবঙ্গ খেতে পারেন । একটি বা দুটি লবঙ্গ দানা নিয়ে মুখে রাখতে পারেন, সেই সাথে আস্তে আস্তে চিবাতে পারেন । এতে আপনার মুখের ভেতর যদি কোনো প্রকার দুর্গন্ধ থেকে থাকে তাহলে সেটা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায় । আপনার দাঁতে বা দাঁতের মাড়িতে কোনো প্রকার ইনফেকশন থাকলে, সেটা সহজেই দূর হয়ে যায় । রাতে বিছানায় শোবার আগে দুটি লবঙ্গ নিয়ে মুখে দিন, এবার আস্তে আস্তে চিবিয়ে খেয়ে নিন, তারপর এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন । এভাবে খেলে আপনি লবঙ্গের সর্বোচ্চ বেনিফিট পেতে পারেন ।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কয়টি করে লবঙ্গ কতদিন পর খেতে হবে ? এর সহজ সমাধান হচ্ছে, আপনি প্রতিদিন দুইটি করে লবঙ্গ নয়মিত খেতে পারেন । এভাবে খেলে আপনার অভার ডোজ হওয়ার সম্ভাবনা নাই । তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো । বেশি ফলের আশায় অতিরিক্ত খেতে যাবেন না । এতে আপনার লিভারের সমস্যা হতে পারে ।
সম্মানিত সুধি, আশা করি লেখাটা আপনাদের ভালো লেগেছে, যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিবেন । আর বন্ধু -বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক -আমিন ।
Post a Comment