সকালে এই তিনটি পাতা খান ডায়াবেটিস হবে সমূলে বিনাশ
বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা । বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ ভুগছেন টাইপ-২ ডায়াবেটিসে এবং বাকী ১০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট ভুগছেন টাইপ -১ ডায়াবেটিসে । টাইপ ১ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ বংশগত । অর্থাৎ আপনার রক্তের সম্পর্কের দাদা-দাদী, নানা-নানী কিংবা আপনার বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এই ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট হলে, আপনার মধ্যেও এই রোগটি হতে পারে । এভাবেই টাইপ ১ ডায়াবেটিস বংশগত ভাবে চলে আসে । আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস মুলত ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কারণে হয়ে থাকে । অর্থাৎ আপনার দেহে ইনসুলিন তৈরী হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ইনসুলিনের প্রধান যে কাজ, আমাদের দেহে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেহ কোষে কোষে পৌচ্ছে দেওয়া । এই রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ভাঙ্গার কাজটাই ইনসুলিন যখন ঠিকঠাক করতে পারেনা, তখনই আমাদের শরীরে দেখা দেয় এই টাইপ ২ ডায়াবেটিস । বাড়তে থাকে আমাদের দেহে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ।
গবেষণায় দেখা যায় ইনসুলিন রেজিসটেন্সের প্রধান কারণ রয়েছে তিনটি । নাম্বার ওয়ান কারণ হচ্ছে সেডেন্টারী বিহ্যাভিয়ার অর্থাৎ অলস জীবন যাপন । সোজা কথায় আপনি এমন কাজ করেন, যেটাতে আপনার শারীরিক মুভমেন্টে নাই বা শারীরিক মেহনত নাই । সেই সাথে আপনার আন হেলদি ফুড স্টাইল এবং আন হেলদি লাইফ স্টাইল । প্রধানত এই তিন কারণে আপনি ডায়াবেটিস ২ প্যাসেন্ট হয়ে যাচ্ছেন । দেখুন আপনারা যারা সেডেন্টারী বিহ্যাভিয়ার, আন হেলদি ফুড স্টাইল বা আন হেলদি লাইফ লিড করেন, তাদের রক্তে ধিরে ধিরে কোলেস্টেরোলের মাত্রা এবং ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে । ফলে তারা হার্টের সমস্যা বা হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যায় পড়তে পারেন ।
এই জন্য দেখা যায় যারা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ প্যাসেন্টই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভুগে থাকেন । সম্মানিত সুধি, আসসালামুল---- । আজকের লেখাতে আমি এমন তিনটি পাতা অর্থাৎ তিনটি গাছের পাতা নিয়ে আলাপ করবো । যে তিনটি পাতা বা গাছের পাতা আপনি যদি সঠিক নিয়মে সঠিক সঠিক সময় খেতে পারেন, তাহলে শুধু আপনাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে না, আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও আস্তে আস্তে কমিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে- ইনশাল্লাহ । পড়া চালিয়ে এক এক করে জানতে থাকুন, পাতাগুলি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং পাতাগুলি খেলে আমাদের কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।
প্রথমেই আপনাদের সাথে যে পাতাটি নিয়ে আলাপ করবো, সেটি আমাদের গ্রামের অতি পরিচিত এবং নানান ওষধী গুণে ভরা একটি পাতা । এটি আপনাদের অনেকেই হয়তো ব্যবহার করে থাকেন । হ্যাঁ বন্ধুরা এটি হচ্ছে আপনাদের নিম পাতা । এই নিন পাতার মধ্যে এমন কিছু মেডিসিনাল প্রপার্টিস আছে, যে গুলো আপনার ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে ।
নিম পাতায় আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাভোনয়েড(Flavonoids), ট্রিচারপিনয়েড(Triterpenoids), এন্টিব্যাকটেরিয়াল কম্পাউন্ড(Anti Bacterial Compound) এবং সেই সাথে সাথে এতে আছে গ্লাইকোসাইড(Glycosides)। বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সমস্ত ওষুধ আছে, সেগুলোর ভেতর অনেক ওষুধেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই গ্লাইকোসাইড । গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১ ডোজ গ্লাইকোসাইড নিলে ফাস্টিং ব্লাড সুগার ১৯% কমে আসে এবং এই গ্লাইকোসাইডের এক ডোজ ২৯% পর্যন্ত ইনসুলিন সেনসিভিটি বৃদ্ধি করতে পারে ।
আপনার নিম পাতার রয়েছে এন্টি হিস্টামিন(Anti Histamine) প্রপার্টিস । এই এন্টিহিস্টামিন প্রপার্টিস আমাদের দেহে ভ্যাসো ডায়লেটর হিসাবে কাজ করে । যার অর্থ হচ্ছে আমাদের দেহে যে রক্তনালী রয়েছে, সে গুলোকে প্রসারিত করে তোলে । ফলে এতে যা হয়, তা হচ্ছে আমাদের দেহে রক্ত এই রক্তনালীর ভেতর দিয়ে খুব সহজেই চলাচল করতে পারে । আর তাই উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা সহজেই হতে পারে না । সুতরাং আপনি আপনার ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন ।
দুই নাম্বারে আসছি কারি পাতা নিয়ে । আন্তর্জাতিক এক জার্নালে এই কারি পাতার গুনাগুণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় । জানা যায় এই কারি পাতা আমাদের ব্লাড সুগার কমাতে দারুন কার্যকরী । কারি পাতা না চিনলে এর আরোও নাম আছে সেগুলো বলছি । কারি পাতাকে কোথাও কোথাও নর সিংহ পাতা, আবার কোথাও মিঠা নিম পাতা বলে থাকে । সাধারণত এই কারি পাতা অনেকেই রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন, স্বাদ এবং সুগন্ধির জন্য । যেটা এই কারি পাতা খুব ভালো ভাবেই করতে পারে ।
কিন্তু এই কারি পাতাতে আছে প্রচুর পরিমাণ মেডিসিনাল এজেন্ট অর্থাৎ মেডিসিনের মতো গুনাবলী । স্পেশালি কারি পাতাতে আছে, এন্টি হাইপারগ্লাইসেমিক প্রপার্টিস । যেটা আমাদের দেহে ব্লাড সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । সেই সাথে সাথে আপনি যদি নিয়ম করে কারি পাতা খাওয়া চালিয়ে যান, তাহলে এই কারি পাতার ফাইবার আমাদের মেটাবোলিজম এবং ডাইজেস্ট প্রক্রিয়াকে কমিয়ে দেয় । যখন আমাদের মেটাবলিজম এবং ডাইজেস্ট প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, তখন আচমকা আমাদের দেহে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে না । অনেক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে জানা যায়, কারি পাতাতে যে মেডিসিনাল প্রপার্টিস আছে, সেটা আমাদের দেহে ইনসুলিনের এক্টিভিটি বাড়িয়ে দেয় । আর যখন আপনার দেহে ইনসুলিন ঠিকঠাক কাজ করবে, তখন আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস কখনই কাছে আসতে পারবে না । অর্থাৎ আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস হবে না ।
আবার আপনি যদি টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট হয়ে থাকেন । সে ক্ষেত্রে আপনার দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরীই হয় না । আর ইনসুলিন প্রডিউস না হওয়ার কারণ হচ্ছে, আপনার প্যানক্রিয়াসে যে বেটা সেল গুলি রয়েছে, সে গুলোর ডেথ হয়ে যায় বা সেগুলোর ভেতর অস্বাভাবিক এক্টিভিটিস লক্ষ করা যায় । এই কারি পাতার মেডিসিনাল প্রপার্টিস প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল গুলিকে রিজেনারেট করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আপনার দেহে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় । সুতরাং আপনি টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্যাসেন্ট, যেটাই হোন না কেন ? আপনি যদি নিয়মিত এই কারি পাতা খাওয়া চালিয়ে যান, তাহল এই কারি পাতা আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে দারুনভাবে সাহায্য করবে ।
কারি পাতায় আছে মুরায়েনাইন(Murrayanine),মাহানিমবাইন (Mahanimbine), গিরিনিমবাইন(Girinimbine) এবং মুকোনাইন(Mukonine) এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যে গুলো আমাদের দেহের রক্তনালীকে বা ধ্বমনীকে অক্সিডেটিভ এস্ট্রেস থেকে সুরক্ষা দেয় । আর যখন আমাদের ব্লাড ভেসেল বা আর্টারীগুলি অক্সিডেটিভ এস্ট্রেস থেকে সুরক্ষিত থাকে, তখন আমাদের হার্ট হেলথ সুরক্ষিত থাকার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে । এ ছাড়াও কারি পাতাতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম । এই পটাসিয়াম আমাদের দেহে থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে । যে সোডিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় । তাই কারি পাতা আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের পাশা পাশি আপনার উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ।
এবার যে পাতাটির কথা আলাপ করবো সেটিও আপনাদের অতি পরিচিত একটি পাতা । এটি হচ্ছে তুলসি পাতা । এই তুলসি পাতার রয়েছে অসংখ্য গুনাবলী । তুলসি পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরী এবং হাইপোগ্লাইসেমিক প্রপার্টিস । এই তিন প্রপার্টিস মিলে মিশে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্যাসেন্টের রক্তে ইনসুলিন সেনসিভিটি বাড়িয়ে দেয় । রক্তে ইনসুলিন সেনসিভিটি যখন বেড়ে যায়, তখন টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্যাসেন্টের ব্লাড সুগার আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ।
আবার দিনভর আমরা যে সমস্ত খাবার খাই, সে খাবারের মধ্যে যে খাবার লবণ ব্যবহার করা হয়, তাতে থাকে সোডিয়াম । যখন লবণের মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের দেহে প্রবেশ করে, তখন সোডিয়াম আমাদের দেহের রক্তনালীর পথকে হার্ড বা শক্ত করে তোলে । আমাদের রক্তনালীর ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা নষ্ট করে দেয় । আমাদের রক্তনালীর ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা কমে গেলে, রক্ত তখন রক্তনালীর ভেতর দিয়ে ঠিকঠাক প্রবাহিত বা চলাচল করতে পারে না । আর রক্ত চলাচল ঠিকঠাক না হলে বা বাধাগ্রস্থ হলে আমাদের দেহে রক্তচাপ যায় বেড়ে । অর্থাৎ আমরা হাইপারটেনশনের মতো শারীরিক জটিলতায় ভুগি ।
তুলসি পাতার মেডিসিনাল উপাদান ইউজিনল(Eugenol) আমাদের রক্তনালীর ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা বৃদ্ধি করে দেয় । ফলে আমাদের দেহে রক্ত রক্তনালীর ভেতর দিয়ে ঠিকঠাক প্রবাহিত হয় বা চলাচল করে এবং এই কারণে আমাদের রক্তচাপও থাকে স্বাভাবিক । তুলসি পাতায় আরোও আছে ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় । এই নাইট্রিক অক্সাইড আমাদের রক্তনালীর পথকে প্রসারিত করে রক্ত চলাচলে স্বাভাবিকতা নিয়ে আসে । ফলে আপনার দেহে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে । তাই আপনি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও দিনে একবার করে তুলসি পাতা খেতে পারেন ।
আসুন এখন আমরা জানবো এই পাতা গুলি খাওয়ার সঠিক নিয়ম কানুন । সাধারণত আমাদের ঘরের আশ পাশেই তুলসি পাতা, নিম পাতা বা কারি পাতা পাওয়া যায় । যদি আপনি সরাসরি গাছ থেকে পেড়ে এই পাতা গুলি খেতে পারেন, তাহলে আপনার ফলটা ভালো আসবে । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৭ থেকে ৮ টি তুলসি পাতা, ৫টি কারি পাতা এবং সেই সাথে ৫টি নিম পাতা একত্র করে চিবিয়ে খেয়ে নিবেন তারপর পানি খাবেন । এগুলো খাবার পর আধা ঘন্টা কোন খাবার না খাওয়াই ভালো । এরপর আধা ঘন্টা পরে আপনি নাস্তা করে নিবেন । যদি আপনি এভাবে কিছুদিন নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে আপনার ব্লাড সুগার এবং উচ্চ রক্তচাপ দুটোই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ইনশাল্লাহ ।
এখন আমরা জানবো সতর্কতা সম্পর্কে অর্থাৎ আমাদের কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ? তুলসি পাতা, কারি পাতা এবং নিম পাতা এই তিনটিই প্রাকৃতিক উপাদান তাই এগুলোতে কোনো প্রকার সাইড ইফেক্ট নাই । কিন্তু আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ চলতে থাকে এবং সেই সাথে এই তিনটি ভেষজ পাতাও আপনি খেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্ব্যই আপনার ডায়াবেটিস চেক করে নিবেন । কারণ দুইটা চিকিৎসা একই সাথে চালালে আপনার সুগারের লেভেল হটাৎ করে নেমে যেতে পারে । আর একটা কথা বলে রাখা ভালো, কোনো অবস্থাতেই এই তিনটি পাতার উপর নির্ভর করে আপনার নিয়মিত ডায়াবেটিসের যে ওষধ, সেগুলি বন্ধ করতে যাবেন না ।
আপনি ডায়াবেটিসের নিয়মিত ওষুধের সাথে সাথে এই পাতা গুলি চালিয়ে যেতে পারেন । যখন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, তখন আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে আস্তে আস্তে ডায়াবেটিসের ওষুধ গুলি আপনি বন্ধ করে দিতে পারেন ।
আশা করি লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিবেন আর বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দিবেন । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক - আমিন ।
Post a Comment