কোন কোন খাবার খেলে স্বর্দি কাশি ভালো হয় ?

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রায়শই স্বর্দি-কাশিতে ভুগে থাকেন । এই রকম মানুষজনের একদিকে যেমন এলার্জি প্রবণতা আছে, অর্থাৎ তাদের সব কিছুতেই এলার্জি হয়ে যায় । ধুলো,ধোয়া,ফুলের রেনু যেটাই হোকনা কেন । আবার অন্য দিকে একটুতেই ঠান্ডা বা গরম লেগে যায় । এই জাতীয় সমস্যা গুলো যাদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান, তারা প্রায় সময় স্বর্দি-কাশিতে ভুগে থাকেন । দেখা যায় যখনই একটু ঠান্ডা কিংবা গরম পড়লো বা সিজন চেঞ্জ হলো, দেখবেন এদের হাচি-কাশি শুরু হয়ে যায় । এদের নাক দিয়ে পানি বের হয়, এলার্জির সমস্যা হতে দেখা যায়, হাঁচি আসে, গলা খুসখুস করে কাশি হয় । কখনো কখনো গলায় টনসিলাটিস, ফ্যারিন জাইটিস হয়, গলায় স্বর্দি লেগে থাকা বা জমে থাকার মতো অনুভুতি জাগায় । এটিকে সাধারণত পোস্ট নাজাল ড্রিপ( Post Nasal Drip) বলা হয় । অনেক সময় এই সমস্যা বেড়ে গেলে স্বর্দি বুকের দিকে বা চেস্টের দিকে চলে যায় । অর্থাৎ বুকে কফ জমে যায় এবং ক্রমাগত কাশি চলতে থাকে ।

যাদের কফ বুকের দিকে না জমে বা বুকের মধ্যে না থেকে গলায় থাকে । এদের শুকনো খুসখুসে কাশি বা খখ খখ এই জাতীয় কাশি হয়ে থাকে । এই রকম সিচুয়েশনে আপনারা করেন কি, আপনারা ওষুধ খেয়ে থাকেন । এন্টিবায়োটিক এবং এলার্জির ওষুধ নিয়ে থাকেন । বাজারে মন্টেলুকাস্ট, ফেক্সোফেনাডিন বা আরো যে সব এন্টি এলার্জির ওষুধ আছে সেগুলোর কোনো একটা খেয়ে থাকেন । এতে আপনাদের সমস্যা সাময়িক ভাবে কিছুটা হয়তো কমে যায় । কিন্তু কিছু রোগী আছে যাদের ক্ষেত্রে এলার্জি প্রবনতা আছে অথবা ঠান্ডা বা গরম লেগে যাওয়ার প্রবনতা আছে । তাদের ক্ষেত্রে ক্রণিক এই সমস্যা গুলো লেগেই থাকে । অর্থাৎ স্বর্দি-কাশি এদের লেগেই থাকে ।

সম্মানিত সুধি, আজকের লেখাতে আমি কিছু খাবার বা হোম মেড রেমিডি নিয়ে আলাপ করবো । এই খবার বা হোম মেড রমিডি গুলি আপনার খতরনাক স্বর্দি বা কাশি দূর করতে ব্যপক ভাবে সাহায্য করবে । যেমনঃ নাক দিয়ে পানি পড়া, শ্লেষ্মা বেড় হওয়া, এলার্জি প্রবণতা, ঘন ঘন সাইনোসাইটিস হওয়া, গলায় একটা খুসখুসে ভাব বা গলায় কফ জমে যাওয়া অর্থাৎ পোস্ট নাজাল ড্রিপ সমস্যায় পড়া । যেটা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা সাধারণত ঘন ঘন গলা খাকারী দিয়ে থাকেন । অর্থাৎ গলার কফ বা স্বর্দি পরিষ্কার করতেই তারা এমনটা করে থাকেন । আবার কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে তাদের বুকে ক্রমাগত কফ জমে থাকে এবং এই কফটা তাদের পরিষ্কার হয় না । এই ক্ষেত্রে এই রোগী গুলো ঘন ঘন কাশতে থাকেন এবং তাদের এক জাতীয় কফ পড়তে থাকে । ( এই সমস্ত সিচুয়েশনে আজকে আমি এমন কিছু খাবার দাবার নিয়ে আলাপ করবো যে গুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ওষুধে যখন এই সমস্ত সমস্যাগুলো পরিপূর্ণভাবে আরোগ্য হচ্ছে না । সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ঘরোয়া এই সমস্ত যে খাবার দাবার গুলো আছে । সেগুলো নিয়ম মতো ঠিকঠাক প্রয়োগ করে দেখুন । আপনাদের এই সমস্ত সমস্যাগুলো স্থায়ীভাবে দূর হয়ে যাবে নয়তো হান্ড্রেড পারসেন্ট আপনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইনশাল্লাহ ।

১ । সবার আগে যে কথাটা বলবো সেটা হচ্ছে, যখন আমাদের ঠান্ডা লেগে যাবে বা স্বর্দি-কাশির মতো সমস্যা গুলো হবে, তখন অবশ্ব্যই অবশ্ব্যই আমাদের প্রচুর পানি খেতে হবে । এই অবস্থাতে আমাদের শরীরকে কোনো অবস্থাতেই ডিহাইড্রেটেড অবস্থায় ফেলানো যাবে না । অর্থাৎ আমাদের দেহকে অবশ্ব্যই অবশ্ব্যই হাড্রেটেড রাখা জরুরী । কেননা এর অনেক গুরুত্ব আছে ।

২ । দ্বিতীয়ত আমরা যে খাবার দাবার গুলো খাবো, সে গুলো অবশ্ব্যই গরম গরম খেতে হবে । আমরা রুটি খাই বা ভাত খাই বা ডাল খাই বা তরকারী আপনি যেটাই বলেন না কেন এগুলো কিন্তু আমাদের গরম গরম খেতে হবে । এই রকম সিসুয়েশনে আমাদের গরম গরম খাবার খুবই জরুরী । স্বর্দি-কাশি হলে সাধারণত আমরা আদা চা খেয়ে থাকি । অর্থাৎ লাল চা বানিয়ে তাতে আমরা আদা মিশিয়ে খাই । কেন খাই ? খাই এই জন্য যে, এটি আমাদের শরীরটাকে আরাম দিয়ে থাকে । হ্যা আদার মধ্যে অনেক গুনাগুণ আছে যেগুলো এই পরিস্থিতে আমাদের আরাম দেয় । অর্থাৎ আদার ভেতর এমন কিছু এন্টি ইনফ্লামেটরি গুনাগুণ বিদ্যমান যে গুলো আমাদের স্বর্দি-কাশিতে খুবই কাজে দেয় ।

৩ । আপনাদের একটি ঘরোয়া রেমিডির কথা বলি, আগে এক কাপ পানি নিবেন, তারপর এতে এক চামচ আদা বাটা মিশ্রিত করে নিবেন এরপর এই মিশ্রণটি ফুটিয়ে নিবেন । ফুটানো মিশ্রণটি অর্ধেকে নেমে এলে এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার করে খেয়ে নিবেন । ফলে আমাদের যে সিজোনাল স্বর্দি-কাশিগুলো এটাক করে এগুলো থেকে অনেকাংশেই আমাদের রেহাই মিলবে । এ ছাড়াও আমাদের গলায় যে খুসখুসি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া বা ইনফ্লামেশন কিংবা গলায় অস্বস্থিভাব, নাকের শ্লেষ্মা বা শুরশুরিভাব বা জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো অনুভূত হয় । সেগুলো যে পানি আদা আটার মিশ্রণ ফুটানো এবং মধু মিশ্রিত করে খাওয়ার যে রেমিডির কথা উল্লেখ করলাম, সেটা দিয়ে দারুন আরাম পাওয়া যায় ।

৪ । এরপর আপনারা এই রেমিডিটা এপ্লাই করতে পারেন । এক গ্লাস গরম পানি নিয়ে এতে কিছুটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে নিন, সংগে একটু মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন । এবার এই মিশ্রণ চায়ের মতো করে খেতে পারেন । যদি আপনি এক পোয়া পরিমাণ পানি নেন তাহলে একটা পাতি লেবুর রস এবং তিন থেকে চার চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিবেন । এরপর সেটি সুন্দরমতো করে নেড়ে মিশ্রিত করে নিয়ে দিনে দুইবার আস্তে আস্তে করে চা পানের মতো করে খেয়ে নিবেন । এতে আমাদের স্বর্দি-কাশির ক্ষেত্রে কাজে দেয় মিউকাস গুলো ভেঙ্গে পড়ে । আমাদের গলা এবং শ্বাসনালিতে যে মিউকাস গুলো জমে থাকে সেগুলো ক্লিয়ার হয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় ।

৫ । এবার আসছি যাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা গরম লেগে স্বর্দি-কাশি হয় । যাদের শুকনো খটখটে কাশি হচ্ছে গলায় একটা খুসখুসে ভাব বা গলায় একটা অস্বস্থি ভাব হচ্ছে তাদের কথায় । এই জাতীয় রোগীদের জন্য একটা ঘরোয়া রেমিডির কথা আলাপ করবো । এটি আপনাদের দারুন কাজে আসবে ইনশাল্লাহ । প্রথমেই শুকনো আদা নিবেন, নিবেন আরোও গোল মরিচ । এরপর এ গুলোকে গুরো করে পাউডার আকারে নিবেন । নিয়ে মিশ্রিত করে রেখে দিবেন । যখনই আপনার শুকনো কাশি হবে, গলা খুসখুস ভাব হবে বা বারবার খকখক করে কাশি হবে ।

তখন এই সমস্ত ক্ষেত্রে এই আদা গোল মরিচের মিশ্রণটি এক চিমটি নিয়ে জ্বিবে বা গালে ধরে রাখবেন । যদি এটা আপনি মুখে ধরে রাখতে না পারেন বা ধরে রাখতে সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে আপনি একটু মিশ্রির টুকরো নিয়ে এর সাথে মিশ্রিত করে মুখে রাখতে পারেন । এতে এই মিশ্রণটি আপনি দীর্ঘক্ষণ গালে বা মুখে ধরে রাখতে পারেবন । দেখবেন এই মিশ্রণটি আপনার শুকনো কাশির ক্ষেত্রে দারুন কার্যকরী ।

৬ । এতো গেলো শুকনো কাশি । যাদের ভেজা গাঢ় কফ আসে বা যাদের বুকের মধ্যে কফ জমে আছে, কাশির সাথে কফ আসে কিন্তু তারপরেও পরিষ্কার হতে চায় না বারবার কাশি আসে তাদের ক্ষেত্রে কি করবো ? এই রকম পরিস্থিতিতে আপনারা হলুদের শেকর নিয়ে গুরো করে নিবেন, এরপর এর সাথে পানি মেশাবেন এবং পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণ আপনারা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করবেন ।

অথবা এর পরিবর্তে মৃদু উষ্ণ এক গ্লাস দুধ নিয়ে এতে এক চা চামচ হলুদের গুড়ো মিশিয়ে দিনে একথেকে দুইবার পান করতে পারেন । এতে আপনার বুকের ভেতর জমে থাকা কফ বা আপনার শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ বা ফুসফুসে জমে থাকা কফ বা মিউকাস গলে বের হয়ে আসে এবং আপনাকে একটা স্বস্থির ভাব জাগিয়ে দেয় ।

৭ । এরপর যে রেমিডির কথা বলবো সেটি হচ্ছে পদিনা পাতা । আপনাদের যাদের ঘন কফ আসে বা গাঢ় কফ আসে, যাদের সাইনোসাইটিস বা নাক জাম ভাব আছে তাদের ক্ষেত্রে এই পদিনা পাতার রস দারুন কার্যকরী । এর ভেতর মেন্থল থাকাতে এটি জমে থাকা ঘন কফ কে ভেঙ্গে আমাদের স্বস্থি এনে দেয় । এই মেন্থল আমাদের গলা দিয়ে দেহে প্রবেশ করলে একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আসে বা কুলিং ভাব আসে । আমাদের গলার বা নাকের ইনফ্লামেশনেও দারুন আরাম এনে দেয় এই পদিনা পাতার রস ।

৮ । এরপরে যে খাবারটির কথা আসে সেটি হচ্ছে গরম গরম স্যুপ । স্বর্দি-কাশিতে গরম গরম স্যুপ দারুন কার্যকরী একটি রেমিডি । এই স্যুপ বিভিন্ন রকম উপাদান যেমন পেয়াজ, আদা, রসুন, গোল মরিচ ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা হয় । এই উপাদান গুলো দিয়ে তৈরী স্যুপ যখন আমরা খাই, তখন এর ফ্লেভার আমাদের বুকে, গলায় বা শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ কে গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং আমাদের স্বস্তি এনে দেয় ।

সব শেষে যে কথাটি বলবো তা হচ্ছে, যারা আমরা নিয়মিত এই স্বর্দি-কাশিতে ভুগে থাকি, তাদের প্রত্যেকদিন একটু উষ্ণ গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করার বা গার্গল করার অভ্যাস তৈরী করে নিতে হবে । এত হবে কি আমাদের গলায় বা টনসিলে যে জীবানুগুলো থাকবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে । আমাদের গলার বা নাকের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন থেকেও আমাদের মুক্তি এনে দিবে এই গরম লবণ পানির গার্গল । এ ছাড়াও আপনি নিয়মিত গরম পানির যে ভাপ, সেটা নাক দিয়ে টেনে নেয়ার অভ্যাস করতে পারেন । এটিও আমাদের বুকে কিংবা শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ গলাতে সাহায্য করে ।

আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে, যদি ভাল লেগে থাকে, তাহলে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সজনদের সাথে শেয়ার করতে একদমই ভুলবেন না । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক । আল্লাহ হাফেজ ।





No comments

Powered by Blogger.