কি খেলে রক্ত বাড়ে
আপনার শরীরে রক্ত শুন্যতা দেখা দিচ্ছে বা আপনার এনিমিয়া হয়েছে । কিন্তু আপনি সেটা কি করে বুঝবেন ? এটা বুঝবার কিছু লক্ষণ আছে । আপনি যখন সামান্য একটু কাজেই হাপিয়ে উঠবেন, কিংবা ধিরে ধিরে আপনি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন, রাজ্যের ক্লান্তি আপনার উপর ভর করছে কংবা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর উঠলে আপনার মাথা ঘুরে যাচ্ছে, চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন । এমন উপসর্গ গুলো আপনার মাঝে দেখা গেলে বুঝতে হবে, আপনার রক্ত কমে গিয়েছে বা আপনার এনিমিয়া হয়েছে । আমাদের দেহে রক্ত কমে যাওয়া মানে আমাদে্র রক্তের হিমোগ্লবিন কমে যাওয়া । যেটাকে আমরা এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা বা রক্তশূন্যতা রোগ বলে থাকি ।
এই শারীরিক সমস্যা বা এনিমিয়া দেখা দিলে আমাদের দেহে কিছু কমন লক্ষণ দেখা যায় । যেগুলোর মধ্যে এক নাম্বার হচ্ছে, দূর্বলতা । শরীর মারাত্নক ভাবে কাহিল বা দূর্বল লাগে । সামান্য ছোট খাটো কোনো কাজ করলেই আমরা হাঁপিয়ে উঠি । অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যায় পড়তে হয় । চোখের মনির নীচের লালচে সাদা অংশটা ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যায় এমনকি পা হাতও সাদা ভাব দেখা যায় ।
এই জাতীয় লক্ষণ গুলো আপনার মাঝে দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনার দেহে কোথাও রক্তের ঘাটতি হচ্ছে বা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে বা আপনার এনিমিয়া হতে যাচ্ছে । এই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে আপনাকে আবশ্যই একটি রক্তের এইচবি পার্সেন্টেজ টেস্ট বা রক্তের হিমোগ্লোবিন টেস্ট করতে হবে । তবে রক্তের সিবিসি বা টোটাল ব্লাড কাউন্ট এই টেস্ট করতে হবে ।
এই টেস্ট করলে এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে আমরা বুঝত পারবো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত বা আমাদের হিমগ্লোবিন কতটা কমেছে বা এনিমিয়ার ধরনটা কেমন । প্রিয় দর্শক রক্তের হিমোগ্লোবন হচ্ছে আমাদের দেহের শক্তির উৎস । আমাদের রক্তে যদি হিমোগ্লোবিন কমে যায়, তাহলে আমাদের শরীর ভিষনভাবে দূর্বল লাগবে । সামান্য একটু কাজ করলেই আমরা হাঁপিয়ে উঠবো, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়বো । অলস অলস লাগবে, ঘুম ঘুম লাগবে । কোনো কাজেই মন বসবে না, সামান্য একটু খানি কাজ করলেই হাপিঁয়ে যাওয়ার মতো ভাব আসবে । এই গুলোই হচ্ছে আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিন বা রক্ত কমে যাওয়ার সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ ।
আজকের লেখাতে আমি এমন পাঁচটি হোম মেড রেমিডি বা বাড়িতে তৈরী রেসিপি আলাপ করবো । যেগুলো আপনার নাগালেই থাকে । অর্থাৎ যে গুলো আপনার হাতের কাছেই পাওয়া যায় । যে খাবার গুলো খেলে বা যে খাবার গুলো দিয়ে আপনি আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বা রক্তস্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে পারেন খুব সহজেই এবং এনিমিয়ার যে লক্ষণ গুলো আপনার শরীরে ছিলো, সেগুলো খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে । তো চলুন শুরু করা যাক ।
১ । সবার প্রথমে যে খাবারটির কথা বলবো, সেটি খুবই মজাদার সুস্বাদু একটি খাবার । অনেক গুণে ভরা একটি খাবার । সেটি হচ্ছে কিসমিস । যেটা মুলত আমরা আঙ্গুর থেকেই পাই । প্রতিদিন সন্ধ্যায় একগ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন, আর সকালে যখন এই কিসমিস গুলো ফুলেফেপে উঠবে তখন একগ্লাস দুধ দিয়ে খেয়ে নিন । আরোও ভাল হয় যদি এর সাথে গুর এবং একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন । এখন প্রশ্ন আসে কতটুক পরিমাণ খাবেন ? আপনি দুই চামচের মতো কিসমিস সন্ধ্যায় একগ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন একগ্লাস দুধে গুর এবং মধু মিশ্রিত করে খেতে থাকুন । এভাবে আপনি পনেরো থেকে ষোল দিনের মতো নিয়মিত থেকে থাকুন । ইনশাল্লাহ খুব দ্রুতই আপনার রক্ত স্বল্পতার লক্ষণ বা এনিমিয়ার লক্ষণ গুলো দূর হয়ে যাবে । আপনার শরীরে রক্ত স্বল্পতা কেটে যাবে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তরতর করে যাবে বেড়ে ।
২ । দুই নাম্বার যে খাবারটির কথা বলবো, তা হচ্ছে সবুজ শাকসবজি বা গ্রীন লিফি ভেজিটেবলঃ এই গ্রীন লিফি ভেজিটেবলের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স গোত্রের যত ভিটামিন আছে সব পাওয়া যায় । যেমন বি১, বি৬, বি১২, এবং আমাদের দেহের জন্য জরুরী কিছু ভিটামিন বিদ্যমান এই সবুজ শাক সবজিতে । এই সব শাক সবজি যেমন পুই শাক, পালং শাক, লেটুস শাক, ব্রকলি ইত্যাদি । এই জাতীয় সবুজ শাক সবজিতে আপনার খাবার তালিকা অবশ্যই অবশ্যই ভরপুর রাখবেন । এই সমস্ত সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর আয়রন বা আয়রন তৈরী করতে সাহায্য করে এমন উপাদান গুলো প্রচুর পরিমাণে বদ্যমান থাকে । আপনার দেহে আয়রন ছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে জনিত যে সমস্যা গুলো থাকবে সেগুলোর ঘাটতিও পুরা করতে এই গ্রীন লিফি ভেজিটেবল সাহায্য করবে । আপনার দেহে রক্ত স্বল্পতা কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলও সঠিক মাত্রায় সহজেই পেয়ে যাবে এই সবুজ শাক সবজি নিয়নিত খাবার মাধ্যমে ।
৩ । এরপরে যে খাবারটির কথা আসে, সেটি হচ্ছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ অর্থাৎ যে সমস্ত শাক সবজি এবং ফলমূলে ভিটামিন সি আছে । যে সমস্ত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে সে গুলো আপনার নিয়মিত খাবার তালিকায় অবশ্ব্যই রাখতে হবে । এমন খাবারের মধ্যে আছে যেমনঃ আমলকি, কমলা, টমেটো কাঁচা মরিচ ইত্যাদি । পাতি লেবু এবং কমলার ভেতর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে । এই খাবারগুলো আপনার খাবার মেনুতে অবশ্ব্যই থাকতে হবে ।
আমাদের দেহে যখন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকবে, তখন আমরা যে খাবার গুলো খাবো সেগুলোর ভেতর আয়রণ, ফলিক এসিড কিংবা অন্যান্য যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান গুলো থাকবে, সেগুলো আমাদের শরীরে এবজর্ব বা শোষন করে নিতে সাহায্য করবে এই ভিটামিন সি । ভিটামিন সি আমাদের দেহে না থাকলে এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেলেও আমাদের দেহ সগুলো নিতে পারে না । এক কথায় আমরা যতই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দাবার খাই না কেন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার না খেলে সেই আয়রন আমাদের দেহে কোনোই কাজে আসবে না । অতএব আমাদের সঠিক ভাবে খাবার থেকে আয়রন পেতে হলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতেই হবে । নচেত আমাদের সব প্রচেষ্টাই বিফলে যাবে ।
৪ । এবার বিশেষ একটি খাবারের কথা বলবো, সেটি হচ্ছে কুলেখারা শাকঃ এটি অজ পাড়া গায়ের বা আমাদের গ্রামেগঞ্জের একটি সহজ লভ্য শাক । এই কুলেখারা শাক অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার । এতে আছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ফলিক এসিড এবং হিমোগ্লোবিন তৈরী করার যাবতীয় পুষ্টিকর উপাদান । এ ছাড়াও এই কুলেখারা শাকে থাকে ফসফরাস এবং জিংক যা আমাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ব্যপক সাহায্য করে । যারা সহজেই এই কুলে খারা শাক পাচ্ছেন তারা এই কুলেখারা শাক থেতলে নিয়ে এর রস এক চামচ মধু দিয়ে দৈনিক খেয়ে নিবেন । অথবা একগ্লাস পানিতে চার/পাচটি পাতা নিয়ে ফুটিয়ে প্রতিদিন এক চামচ করে খেতে পারেন । এই কুলেখারা শাক আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি খুব সহজেই দূর করে দিতে সাহায্য করে ।
৫ । এরপরে যে খাবারটির কথা বলবো, সেটি হচ্ছে কালোতিলঃ এই কালো তিলে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস । এগুলো আমাদের অস্থি মজ্জাকে সতেজ এবং মজবুত করে । যে অস্থিমজ্জা আমাদের রক্ত তৈরীর ফ্যাক্টরী । ম্যাগনেশিয়াম, পসফরাস, পটাশিয়াম এবং জিংক এই এলিমেন্ট গুলো আমাদের রক্ত তৈরীর কারখানা "অস্থিমজ্জাকে" স্ট্রং করে গড়ে তোলে এবং এই রক্ত তৈরীর কারখানা অস্থি মজ্জার ক্ষয়ক্ষতিকে দ্রুতই রিকভার করে তোলে । এতএব এই কালোতিল আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়মিত খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে ।
সম্মানিত সুধি, এই এতক্ষণ যে হোম মেড রেমিডি বা ন্যাচারাল রেমিডি গুলো আলোচনা করলাম সে গুলো যদি আপনারা নিয়ম অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় নিয়মিত খেয়ে যান, তাহলে আপনাদের রক্ত স্বল্পতা বা এনিমিয়ার মত সমস্যা আস্তে আস্তে কেটে যাবে । আপনাদের অবসাদ ভাব, দূর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং অল্প স্বল্প কাজেই হাঁপিয়ে ঊঠার মতো শারীরিক সমস্যা গুলো বিলিন হতে থাকবে ।
আশা করি আজকের লেখাটা আপনাদের ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটা লাইক দিবেন । আর বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় সজনদের সাথে শেয়ার করতে একদমই ভুলবেন না । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক ।
Post a Comment