লিভার সুস্থ রাখবেন কীভাবে
লিভার বা যকৃৎ মানুষের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অরগান বা অঙ্গ । এই লিভার যেমন আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে । তেমনি আমাদের দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় । ব্লাড বা রক্ত ফিল্টার করে, প্রোটিন সিনথেসিস করে । ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনী কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি নিজের কাছে সঞ্চিত করে রাখে । এই রকম আরোও প্রায় হরেক রকমের কার্যকলাপ আছে লিভারের, যে কার্যকলাপের কারণে আমাদের দেহ সুস্থ থাকে । সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি, আমাদের সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য লিভার সুস্থ রাখা কতটা জরুরী ।
সম্মানিত পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার বা যকৃত কিভাবে সুস্থ রাখতে পারি সেই বিষয় নিয়ে আলাপ করবো । আশা করি আপনাদের মনোযোগ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবো
পরিপাকতন্ত্রেরে একটি প্রধান অরগান বা অঙ্গ হচ্চে লিভার বা যকৃৎ । খাবার কিংবা ওষুধ যেটাই আমরা খাইনা কেন, সব পরিপাক হয়ে রক্তের মাধ্যমে বিপাকের জন্য লিভার বা যকৃতে যায় । এই লিভারের প্রধান কাজ পরিপাক হওয়া খাবারের পুষ্টি উপাদান গুলো ভেঙ্গে আমাদের দেহে এনার্জি বা শক্তি উৎপন্ন করা । সেই সাথে এর বারতি পুষ্টি উপাদান গুলো গ্লুকোজ আকারে গচ্ছিত করে রাখা । এ ছাড়াও লিভার পিত্ত তৈরী করার মাধ্যমে খাবারের চর্বি ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে ।
লিভার সুস্থ রাখতে হলে, আমাদের লিভার খারাপ হওয়ার কারণ গুলোও জানতে হবেঃ
আসুন দেখি লিভার খারাপ হওয়ার কারণ গুলো কি কি ?
১ । স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আমাদের লিভারকে সুস্থ সতেজ রাখে। লিভার খারাপ হওয়ার একটা প্রধান কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান।
২ । অকারণে অযথাই অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া । এমনকি ঠান্ডা ও জ্বরের জন্য বহুল ব্যবহৃত ওষধ গুলি খাওয়াও লিভার খারাপের একটি কারণ । যেমন ব্যথানাশক, ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি ।
৩ । ধুমপান করাঃ সিগারেটের উপাদান গুলো সরাসরি লিভারের কোষ-কলাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ।
৪ । অপর্যাপ্ত ঘুমঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হতে পারে । যাঁরা রাতে নিয়মিত ঘুমান না, তাঁরা স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদ্রোগের পাশাপাশি লিভার–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগে থাকেন ।
৫ । অনিয়ন্ত্রিত খাবারঃ অপুষ্টিকর খাবার খাওয়া । খাবারে অনিয়ম , সকাল সকাল না খাওয়া, খারাপ তেলে খাওয়া বা অতিরিক্ত তেলে খাওয়া । এ ছাড়াও ফুড, জাঙ্ক ফুড খাওয়ায় লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে ।
৬ । কেমিকেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াঃ কেমিকেল সমৃদ্ধ যে কোন খাবারই লিভারের জন্য ক্ষতিকর । এ গুলো ছাড়াও প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল ফুড কালার, আর্টিফিশিয়াল চিনিযুক্ত খাবারও আমাদের লিভারের জন্য ক্ষতিকর ।
৭ । মাদকাসক্তিঃ যে কোন ধরনের মাদক, যেমন মারিজুয়ানা, কোকেন–জাতীয় ড্রাগ, এলকোহল ইত্যাদি লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।
৮ । এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, পরজীবীর সংক্রমণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অস্বাভাবিকতা, বংশগত কারণ কিংবা ক্যানসারের কারণেও আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ।
সম্মানিত পাঠক এতক্ষণ আমরা জানলাম কেন আমাদের লিভার নষ্ট বা খারাপ হয় । আসুন এখন আমরা জেনে নেই, কিভাবে আমাদের লিভারকে সুস্থ রাখতে পারি ।
১ । ফ্যাটি লিভার আমাদের লিভার ড্যামেজের অন্যতম একটি কারণ । তাই ফ্যাটি লিভার এড়াতে আমাদের ওজন কমাতে হবে । অতিরিক্ত তেল, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, যেমন সাদা পাউরুটি, পাস্তা ও চিনি এই সমস্ত খাবার যতটা সম্ভব খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ।
২ । কাঁচা ও আধা সেদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে ।
৩ । আপনার দৈনন্দিন খাবার মেনুতে তাজা ফল, শাকসবজি, লাল চাল ইত্যাদি রাখতে হবে । যেমন রসুন, জাম্বুরা, গাজর, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, আপেল, অলিভ অয়েল, লেবু, বাঁধাকপি ও হলুদ ইত্যাদি আপনার খাবার মেনুতে রাখতে পারেন । এগুলো লিভারের জন্য খুবই উপকারী ।
৪ । নিয়মিত ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হবে । এতে আপনার লিভার সুস্থ সবল থাকবে ।
৫ । যে কোন ধরনের টক্সিন আমাদের লিভার নষ্ট করে দিতে পারে । তাই পোকামাকড়ের ওষুধ, রাসায়নিক সার, কেমিক্যাল ও অ্যাডিটিভের সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে । মশার ওষুধ ব্যবহারের সময় মাস্ক পরিধান নিশিত করতে হবে এবং সেই সাথে কক্ষের ভেন্টিলেশন–ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে ।
৬ । আপনার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস কারও সঙ্গে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যেমন রেজর, দাঁতের ব্রাশ, নেইল কাটার ইত্যাদি । অবশ্যই অবশ্যই হেপাটাইটিস এ ও বি–র জন্য টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।
৭ । সবশেষে যে পরামর্শ থাকবে সেটা হচ্ছে, যে কোন অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করতে যাবেন না ।
আশা করছি আজকের লেখাটা আপনাদের ভালো লেগেছে, যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন । আর বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করতে একদমই ভুলবেন না । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক ।
Post a Comment