যে সব খাবার মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে

বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের খেতে হয় । খাওয়ার বিকল্প নাই । আমাদের জীবদ্দশায় আমরা কত রকমের খাবার খাই । মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল আরোও কত কি । এই খাবারেই আমাদের দেহে এনার্জি আসে প্রাণশক্তি আসে । তাই বেচে থাকতে চাইলে আমাদের খাবার খেতেই হবে । কিন্তু এই খাবার যদি আমাদের বাচানোর পরিবর্তে মৃত্যুর কারণ হয়, তাহলে ? হ্যাঁ প্রিয় দর্শক ঠিকই শুনছেন । এমন কিছু খাবার আছে যে গুলো আমাদের বাচানোর পরিবর্তে মৃত্যুর কারণ হতে পারে, হতে পারে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি ।

আজকে আমি আপনাদের সাথে এমন কিছু খাবার নিয়ে আলাপ করবো, যে গুলো আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে । ধ্বংশ করে দিতে পারে আমাদের জীবন ।

আমরা চাল,ডাল, মাছ, মাংস, শাকসবজি এবং ফলমূল সহ কত বিচিত্র রকমের খাবার খাই । কিন্তু এই সব খাবারের মধ্যে বেশ কিছু খাবার আছে, যে গুলো আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ, এমন কি আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে । সচরাচর এই সব খাবার আমাদের জন্য নিরাপদ মনে হলেও, বিশেষ পর্যায়ে বা বিশেষ অবস্থায় এ গুলো আমাদের জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে । তাৎক্ষণিক ভাবে এ গুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে খাবার ফলে আমাদের শরীরের জন্য মারত্মক হুমকি হতে পারে । আমাদের জীবনের জন্য হুমকি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে এমন কয়েকটি খাবারঃ

১ । পটকা মাছঃ আমাদের অনেকের কাছে পটকা মাছ বা পাফার ফিস বেশ প্রিয় একটি মাছ । অনেকেই আমারা এই মাছটি বেশ মজা করে খাই । কিন্তু এই মাছটি যদি আমরা ঠিকঠাক প্রসেসিং করে না খাই, তাহলে হয়তো আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে । এমনকি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে । এর কারণ এই মাছের দেহে আছে বিষাক্ত নিউরোটক্সিন যেটা সায়ানাইডের থেকেও মারাত্মক । সাধারণত এই মাছ যে ক্ষতিকর, তা কিন্তু নয় । কিন্তু কোন ভাবে যদি এর দেহে এই বিষাক্ত নিউরোটক্সিন থেকে যায়, আর এই বিষাক্ত নিউরোটক্সিন মানুষের পেটে চলে যায় । তাহলে এটি মানুষকে পক্ষাঘাত গ্রস্থ করতে পারে । শুধু তাই নয় । মানুষকে কয়েক মুহুর্তেই মেরেও ফেলতে পারে । তাই এটি খেতে চাইলে খুব সতর্কতার সাথে এই বিষাক্ত উপাদানটি এর দেহ থেকে আলাদা করে নিতে হবে ।

২ । মাশরুমঃ বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমরাও মাশরুম খেয়ে থাকি । এবং এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার । মাশরুম উচ্চরক্ত চাপ কমাতে, ডায়াবেটিস রোগে, টিউমার কোষের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী । এ ছাড়াও কোষ্টকাঠিন্য, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও বাত-ব্যথাতে বেশ উপকারী । তবে সব মাশরুম যে সমান কার্যকরী তা কিন্তু নয় । কেননা মাশরুম আছে নানান প্রজাতির । কিছু কিছু প্রজাতি আছে যেগুলো মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । আমাদের দেশে সাধারণত ৮ থেকে ১০টি প্রজাতির চাষ করা হয় । কিন্তু আমাদের দেশেও এমন কয়েকটি প্রজাতির প্রাপ্তি মেলে, যে গুলো আমাদের দেহের জন্য বিষাক্ত বা ক্ষতিকর । যেমন বুনো মাশরুম । বিশেষ করে আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতা বলে যে বুনো মাশরুম পাওয়া যায়, তাতে এক প্রকার ছত্রাক বিদ্যমান । যা মানব দেহের লিভার এবং কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।

৩ । খেসারীর ডালঃ আমাদের দেশে মসুর এবং মুগ ডালের পাশাপাশি আমরা খেসারীর ডালও খেয়ে থাকি । পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই ডালে অনেক সময় বোয়া(BOAA) নামক এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে । যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরীতে ভুমিকা রাখে । এই অ্যাসিড স্নায়ুবিক পঙ্গুত্ব সৃষ্টি করতে পারে । যেটা হতাৎ করেই দেখা যায় । যার ফলে হাটতে অসুবিধা এবং পায়ে যন্ত্রণ হতে পারে । এমনকি পা অবশ হয়ে যেতে পারে । দীর্ঘদিন ধরে খেসারীর ডাল খেলে এই সমস্যা হতে পারে বলে পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন ।

৩ । আলুঃ আলু আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি অংশ বলা যায় । কেননা বর্তমান দিনে আমরা প্রায় প্রত্যেক দিন আলু খেয়ে থাকি । এই আলুতে শেকরের সৃষ্টি হলে, সেখানে "গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড" নামে এক ধরনের উপাদান জন্ম নেয় । বিশেষ করে দীর্ঘ সময় আলু পরে থাকলে এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় । অনেক সময় আবার আলুর কান্ডে বা পাতাতেও এই উপাদান সৃষ্টি হতে পারে । বিশেষ করে আলুর গায়ে শেকর হলে যে লাল স্পট তৈরী হয়, সেখানে এই উপাদান বেশি হয়ে থাকে । পুষ্টিবিদরা বলছেন এই "গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড" মানুষের দেহে প্রবেশ করলে মৃত্যুও ঘটতে পারে । এ ছাড়াও হতে পারে মানুষের মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া । এমনকি মানুষ কোমায়ও চলে যাতে পারে । পুষ্টিবিদরা বলছেন, তিন থেকে ছয় মিলিগ্রাম যদি কেউ কোন উপায়ে খেয়ে থাকে, তাহলে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে । এ ছাড়াও আলুতে "কারসিনোজেন" নামক এক ধরনের সবুজ রঙের উপাদান দেখা যায় । যেটা আমাদের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে । তাই এ ধরনের আলু এড়িয়ে চলা আবশ্যক ।

৪ । টমেটোঃ টমেটো গাছের পাতা এবং এর কান্ডে এক ধরনের উপাদান থাকে । যেটাকে "অ্যালানাইন" বলা হয়ে থাকে । এটি আমাদের পাকস্থলির জন্য ক্ষতিকর । পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁচা টমেটোর ভেতর এই উপাদান থাকতে পারে । তাই ভাল করে রান্না ছাড়া বেশি কাঁচা টমেটো না খাওয়াই ভালো । শুধু তাই নয় । টমেটো গাছের পাতাও খাওয়া উচিৎ নয় ।

৬ । কাজু বাদামঃ তেতো এবং মিষ্টি এই দুই রকম স্বাদের কাজু বাদাম আছে আমাদের দেশে । কাজু বাদাম অনেক পুষ্টিকর হলেও, তেতো স্বাদের কাজু বাদামে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে । যেটা আমাদের দেহে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরী করে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে । পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁচা অবস্থায় তেতো স্বাদের কাজু বাদাম একদমেই খাওয়া উচিৎ নয় ।

৭ । আপেলের বিচিঃ আপেল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল । তবে এর বিচির ভেতর একটু খানি সায়ানাইড থাকতে পারে । তাই কারোও পেটের ভেতর যদি একটু বেশি পরিমাণে আপেলের বিচি বা এই বিচির নির্যাস ঢুকে পরে, তাহলে তার পেটে সায়ানাইড ঢুকে পরার সম্ভাবনা থাকে । এতে আমাদের মৃত্যুও হতে পারে । তাই আপেলের জুস বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো, বিচি সেখানে যেতে না পারে ।

৮ । কাঁচা মধুঃ মধু একটি অত্যন্ত পুষ্টিমানের খাবার । এর আছে অনেক গুণ । কিন্তু পাস্তুরিত না করলে সেই মধু আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এমনটাই বলছেন, পুষ্টিবিদরা । তারা বলছেন, কাঁচা মধুতে অনেক বিষাক্ত উপদান থাকতে পারে এবং মানুষকে মেরেও ফেলতে পারে । পুষ্টিবিদরা আরোও বলছেন, এমন মধু খেলে ঘোর ঘোর অনুভূত হওয়া, ঘেমে যাওয়া কিংবা বমি বমি লাগতে পারে । তাই কাঁচা মধু না খেয়ে প্রক্রিয়াজাত মধু খাওয়া উচিৎ । খাওয়ার সময় আমাদের আরোও লক্ষ্য রাখা উচিৎ যাতে মধুতে কোনক্রমেই মৌচাকের বা মৌমাছির দেহের কোন অংশ না থাকে ।

৯ । মটর শুঁটি ও শিমের বিচিঃ মটর শুঁটি ও শিমের বিচি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার এবং জনপ্রিয় । শুধু আমাদের দেশেই নয়, এটি সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয় । তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই মটর শুটি-শিমের বিচিতে ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন নামের একটি উপাদান থাকে । যা আমাদের অনেকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে । তাই রান্নার সময় এটি পানিতে ১৫ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে নিতে হবে । তারপর সেই পানি ফেলে দিয়ে আবার রান্না করতে হবে । এরপর খেতে হবে ।

১০ । কামরাঙ্গাঃ কামরাঙ্গা আমাদের অনেকের কাছেই একটি প্রিয় ফল । বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের কাছে । সুস্থ্য দেহের জন্য এটি একটি উপকারী ফল । কিন্তু যাদের কিডনি এবং স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা আছে, তাদের জন্য এই ফলটি ক্ষতিকারক । পুষ্টিবিদরা এমনটাই জানাচ্ছেন ।

১১ । কচুঃ বলা হয়ে থাকে কচু গরীবের রক্তের আধার । তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই কচু গাছ যদি ছায়ায় হয়ে থাকে তাহলে এতে একটি কম্পোনেন্ট উৎপন্ন হয় । যেটি আমাদের জন্য এলার্জির কারণ হয়ে দাড়ায় । কচু খেলে আমাদের গলা ফুলে যায়, চুলকায় । কারণ এতে অক্সালেট নামক একটি উপাদান থাকে । এটি অনেক সময় মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে । তাই কচু খেলে সঙ্গে লেবু জাতীয় জিনিষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা । কেননা এটি অক্সালেটকে নষ্ক্রিয় করে দেয় ।

১২ । ডিমঃ ডিম আমাদের একটি সুপার ফুড । এটি আমাদের স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত উপকারী, এতে কোন সন্দেহ নাই । কিন্তু কাঁচা ডিম, আধা সেদ্ধ ডিম কিংবা ডিমের এক সাইডে পোঁচ করে খাওয়া আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে । বিশেষ করে যে সব মায়েরা গর্ভবতি যাদের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতিকর বলে পুষ্টিবিদরা মত দিচ্ছেন ।

১৩ । প্রসেসড ফুডঃ এখন আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে । তাই আমরা এখন ক্যানের খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি । কেননা এটি আমাদের সময় বাঁচিয়ে দেয় । কিন্তু এই ক্যানের খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের মান ভাল না হলে বা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে, এটি আমাদের ডায়রিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদির কারণে পরিণত হতে পারে ।

এ ছাড়াও শুটকি মাছ কিংবা শুকনো ফলে অনেক ক্ষেত্রে সালফার ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এটা আমাদের পেটে প্রবেশ করলে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে । যেটা আমাদের পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন ।

তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.