সুস্থ থাকতে সকালে খালি পেটে যা খাবেন

আমরা যারা শরীর নিয়ে সচেতন । তারা আমাদের এই শরীর সুস্থ সবল রাখতে কত কিছুই না করি । আমরা কেউ ওজন কমাতে না খেয়েই দিন কাটাই । আবার অনেকে দিন-রাত শরীর চর্চা করি । তবে যে যাই করিনা কেন, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য খাবারের বিকল্প নাই । তবে কে কোন ধরনের খাবার আমরা কোন সময় খাচ্ছি, সেটার উপর নির্ভর করে আমাদের সুস্থতা । আপনি যখন যা ইচ্ছে খাবেন আর সুস্থতা আশা করবেন এমনটা কখনোই হতে পারে না ।
কারণ আপনার সুস্থতার জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার । আপনি ঠিকঠাক পুষ্টিকর খাবার না খেলে, আপনার শরীরে ঘাটতি আসবে মিনারেল এবং ভিটামিনের । কিংবা আপনার শরীরে জমে যাবে অতিরিক্ত চর্বি । আবার হতে পারে নানান অসুখ-বিসুখ । বিশেষ করে আপনি সকালের খাবার ঠিকঠাক না খেলে সারাদিন আপনার শরীর পাবে না এনার্জি বা প্রাণশক্তি । সুতরাং সারাদিন চনমনে বা ইনার্জিটিক থাকতে আপনাকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে বিশেষ কিছু খাবার ।

আমাদের সুস্থতার জন্য সকালে খালি পেটে যে বিশেষ খাবার গুলো খাওয়া জরুরী সেটা নিয়েই আমার আজকের আলাপ । আশা করি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সাথে পাবো । তো চলুন জেনে নেয়া যাক । সুস্থ থাকতে হলে সকালে খালি পেটে আমরা কোন কোন খাবার গুলো খাবো ।

১ । মধুর সঙ্গে হালকা গরম পানিঃ প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন একটু মধু । সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে একটু লেবুর রস মধু সহ মিশিয়ে খান । এতে আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করবে । আপনার লিভারকে রাখবে পরিষ্কার । বাড়িয়ে তুলবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা । কেননা মধুতে আছে প্রচুর খনিজ, ভিটামিন এবং এনজাইম, যা আপনাকে বিভিন্ন রোগ থেকে রেহাই দেয় । প্রতিদিনের একটু মধু খাওয়া আপনাকে ঠান্ডা, কফ, কাশির উপশম থেকে রেহাই দিতে পারে । এ ছাড়াও এটা আপনাকে এসিডিটির সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে । মধুর অ্যান্টিসেপ্টিক গুণাবলী পাকস্থলীর মিউকাস নিঃসরণ ঘটিয়ে আমাদের জ্বালাপোড়া থেকেও রেহাই দেয় ।

২ । ভেজানো কাঠবাদামঃ কাঠবাদাম ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর একটি খাবার । আর পানিতে ভেজালে তা আরোও বেড়ে যায় । দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর ৫-১০টি কাঠবাদাম খেলে এটি সারাদিন পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি আমাদের রুচিও বাড়িয়ে দেয় । বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, কাঠবাদামের আবরণে ট্যানিন নামের একটি উপাদান থাকে, যেটা আমাদের পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে । আর কাঠবাদাম ভেজানো হলে এটা সহজেই খুলে যায় গিয়ে পুষ্টি উম্মুক্ত করে দেয় । ফলে শরীর তা সহজেই নিতে পারে ।

৩ । আমলকীর জুসঃ সকালে খালি পেটে খেতে পারেন আমলকির জুস । তবে হ্যাঁ এই জুস খাওয়ার পর ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চা বা কফি খাবেন না । আমলকিতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা মাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বর্ণিত আছে, নিয়মিত আমলকী খেলে আয়ু বাড়ে। এ ছাড়াও এর আছে নানান ভেষজ গুণ । আমলকীর রস আমাদের লিভার, পেটের পীড়া, অজীর্ণ, হজমি ও কাশিতেও বেশ কার্যকরী । ঠেকাতে পারে সর্দিকাশিও । এ ছাড়াও এটা আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে হজমে সাহায্য করে এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায় ।

৪ । পেপেঃ আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেপে খেতে পারেন । এতে আপনার পেট থাকবে পরিষ্কার এবং অন্ত্রের নড়াচড়াও বৃদ্ধি পাবে । তবে পেপে খাওয়ার পর এক ঘন্টা কিছু না খাওয়াই ভাল । এটি আপনার শরীরে বাজে কোলস্টেরলের কমাতে ভুমিকা রাখে,ওজন কমায় এবং আপনার ত্বক রাখে পরিষ্কার । এতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর নানা উপকারী উপাদান যা আমাদের শরীর রাখে সুস্থ । এটি আমাদের চুল আর ত্বকের জন্যও উপকারী । প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে পেঁপেতে ফলে এটি আমাদের হৃৎস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং উচ্চরক্তচাপ এড়াতে সাহায্য করে । যারা শরীরের চর্বি কমাতে চান ,তারা নিয়মিত খেতে পারেন পেপে । এতে এক দিকে যেমন ক্যালরি আছে কম, অন্য দিকে এর আঁশ আমাদের পেট ভরা রাখতে ভুমিকা রাখে । ফলে আমাদের ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে । এ ছাড়াও পেপে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মজবুত রাখে, সেই সাথে প্রতিরোধ গড়ে তোলে কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের বিরুদ্ধে ।

৫ । তরমুজঃ খালি পেটে তরমুজ খাওয়া দারুন উপকারী । এতে ক্যালরি থাকে কম, কিন্তু ইলেকট্রোলাইটস থাকে বেশি । আমরা যদি দৈনিক দুই কাপের মতো তরমুজের জুস খাই তাহলে আমাদের দেহের ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সির চাহিদা মিটে যায় । এত আছে প্রচুর পটাশিয়াম যা আমাদের ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে । অ্যাজমার মতো রোগ এবং ব্যথা উপশমেও তরমুজ বেশ কার্যকরী । এতে বিদ্যমান বিশেষ কয়েক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড ক্রমাগত নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি অব্যাহত রাখে ।

৬ । খেজুরঃ দেহে দ্রুত এনার্জি যোগাতে খেজুরের রয়েছে বেশ সুনাম । তাই দিনের শুরুতেই খেতে পারেন খেজুর । এত আছে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ, যা আমাদের হজমের জন্য বেশ ফলদায়ী । আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যায় খেজুর দারুন কার্যকরী । এটি হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তপ্রবাহে গতি নিয়ে আসে । সামান্য কয়েকটা খেজুর আপনার ক্ষুধার জ্বালা কমিয়ে দিয়ে পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে সাহায্য করে । এবং আপনার দেহের শর্করার অভাব মিটিয়ে দেয় । যার ফলে আপনার ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে । এ ছাড়াও এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা আমাদের হাড়কে মজবুত রাখে । অধিকন্তু আমাদের শরীরের সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সমতাও রক্ষা করে ।

সম্মানিত সুধি যদি লেখাটা আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং সেই সাথে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক ।


No comments

Powered by Blogger.