তারাবির নামাজ কীভাবে এলো

রমজান মানেই তারাবি । তারাবি ছাড়া রমজান ভাবাই যায় না । তারাবি পবিত্র রমজান মাসের একটি অন্যতম আমল । পবিত্র এই রমজান মাসে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত এবং প্রতিদান প্রাপ্তির অন্যতম উপলক্ষ্য । রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পূণ্যের আশায় তারাবি নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মাফ করে দেয়া হবে । ( বুখারী, হাদিস-৩৭, আবু দাউদ, হাদিস-১৩৭১ )

রমজান এলেই আমরা তারাবি নামাজ পড়ি । কিন্তু এই তারাবি নামাজ কিভাবে এলো ? এমন প্রশ্ন হয়তো আপনার মনেও আসে । তো এই প্রশ্নের উত্তর জানাতেই বা তারাবি নামাজ কিভাবে এলো সেটা জানাতেই আজকের আলাপ ।

তো তার আগে তারাবি নিয়ে দুটো কথা না বললেই নয় । তারাবি নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা । তবে এর গুরত্ব অনেক । তারাবি নামাজ ফরজ নামাজের মতো জামায়াতে পড়তে হয় । শুধু তাই নয় এই তারাবি নামাজের জন্য আলাদা করে ঈমামেরও আয়োজন করা হয় । এবং বেশির ভাগ মসজিদে তারাবিতে সম্পূর্ণ কোরআন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খতম দেয়া হয় ।

এর পাশাপাশি তারাবিকে রমজানের বিশেষ নিদর্শনও বলা হয়ে থাকে । কেননা রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসে এশার নামাজের পর জামাতে উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ে কোন নামাজ পড়া হয় না । তাই এশার নামাজের পর উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ে নামাজ আদায় করাতে আমরা বুঝে যাই যে, এখন রমজান মাস । আর এতেই বোঝা যায় তারাবির গুরুত্ব সুন্নত কিংবা নফলের চেয়েও বেশি ।

রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় তিনি যেভাবে তারাবি পড়াতেন এবং পড়তেনঃ মহানবী সাঃ তারাবির জামাত নিয়মিত পড়ান নি । কখনোও তিনি তারাবি নামাজ জামাতে পড়িয়েছেন আবার কখনোও তিনি কয়েক রাকাত পড়িয়ে হুজরায় চলে গেছেন এবং একাকি বাকী তারাবি নামাজ আদায় করেছেন । বেশির ভাগ সময় তিনি তারাবি নামাজ একাকীই পড়তেন ।

তিনি নিজে কেন তারাবি জামাতের নিয়ম করেন নি, সেটার কারণ তিনি উম্মতকে জানিয়ে গেছেন । কারণটা ছিল তিনি নিয়মিত জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো । এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায় এসেছে, রমজানের এক রাত্রিতে মহানবী মসজিদে গিয়ে তারাবি নামাজ পড়া শুরু করলেন । নবীজির নামাজ পড়া দেখে কিছু সাহাবি মহানবীর পেছনে নামাজ পড়া শুরু করে দিলো ।

সাহাবিদের মাঝে বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে, পরের দিন তারাবিতে আরোও বেশি সাহাবি নবীজির পেছনে ইক্তিদা করলেন । এভাবে তৃতীয় দিন আরোও বেশি বেশি সংখ্যক সাহাবি নবীজির পেছনে ইক্তিদা করলো । এতে মসজিদে আর জায়গা হয়ে উঠলো না । এ দিন তিনি ফজরের নামাজের পর, সাহাবিদের বললেন, আমার ভয় হয় । এভাবে চলতে থাকলে তারাবি নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে । যা তোমরা আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়তে পারো । মহানবী তারাবি নামাজ পড়ার বিধান এই অবস্থায় রেখেই মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে চলে গেলেন । ( বুখারী, হাদিস- ২০১২, মুসলিম, হাদিস-১১০৪ )

এবার আসি মূল আলাপে, তারাবি নামাজ কিভাবে এলোঃ রাসূল সাঃ আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার পর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাঃ এর শাসন আমলে এবং ওমরের এর শাসন শুরু হবার প্রাক কালে এক ঈমামের পেছনে তারাবি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিলনা । পরবর্তী কালে রমজানের কোন এক রাতে হযরত ওমর রাঃ মসজিদে নববীতে দেখলেন, মসজিদের বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড হয়ে জামাত আদায় চলছে । আবার কেউ একাকী তারাবি নামাজ আদায় করছেন ।

তিনি এই অবস্থা দেখে, ভাবনায় পড়ে গেলেন । ভাবলেন সবাইকে এক ঈমামের পেছনে একত্র করে দিয়ে জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করলে বেশ ভালো হবে । এবং এর পর তিনি এক ঈমামের পেছনে তারাবি নামাজ আদায় করার ফরমান জারি করে দিলেন । এবং সেই সাথে সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রাঃ) কে সেই তারাবি জামাতের ঈমাম বানিয়ে দিলেন । ( বুখারী,হাদিস-২০০৯, ২০১০ )

কোন সাহাবি এই নিয়মের বিরোধিতা করেনি । এর পর থেকেই তারাবি নামাজ জামাতে এক ঈমামের পেছনে আদায় হয়ে আসছে ।

সম্মানিত সুধি তো আজ এ পর্যন্তই । ভাল লাগলে লাইক শেয়ার করতে ভুলবেন না । আল্লাহ সকল অবস্থায় আমাদের সহায় হোক ।

No comments

Powered by Blogger.