জলপাইয়ের যত গুণাগুণ
শীতর মৌসুমে জিবে পানি আসা একটি লোভনীয় ফল হচ্ছে জলপাই । শীত আসতে না আসতেই বাজারে উঠে এই ফলটি । সাধারণত ডালের সঙ্গে বা টক রান্না করে কিংবা আচার করেও এই জলপাই আমরা খাই । তবে কাঁচা জলপাইয়ে রয়েছে অনেক অনেক পুষ্টিগুণ। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি অত্যন্ত গুণে ভরা একটি মৌসুমী ফল । সাধারণত গ্রীষ্মের মাঝামাঝি, মলিন সাদা ফুলে এই গাছ, ছেয়ে গেলেও, এর ফল খাওয়ার উপযোগী হয়, শরৎ- হেমন্তে । কাঁচাই হোক আর পাকাই হোক যে কোনো অবস্থাতেই এই জলপাই অত্যন্ত সুস্বাদু । জলপাই শুধু ফল হিসাবেই নয়, এর তেল থেকে শুরু করে, পাতাতেও আছে অনেক ঔষধি গুণাবলী ।
জলপাই অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফলঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে খাদ্যশক্তি আছে ৭০ কিলোক্যালরি, শর্করা আছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ক্যালসিয়াম আছে ৫৯ মিলিগ্রাম, আর ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ।
আসেন জলপাইয়ের আর কি কি গুণাবলী আছে সে গুলো এক এক করে আলোচনা করিঃ
১ । পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে: আপনি যদি নিয়মিত জলপাই খান তাহলে গ্যাস্ট্রিক-আলসার কম হবে । বিপাকক্রিয়াও ঠিকঠাক ভাবে হবে । এছাড়াও জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা আপনার খাবার হজমেও সাহায্য করবে ।
২ । হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়: জলপাইয়ে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভুমিকা রাখে । কোনো মানুষের রক্তে যদি ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিকেল ও কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যায়, তখন মানুষের হার্ট অ্যাটাকেরও সম্ভাবনা বেড়ে যায় । কিন্তু এই জলপাইয়ের তেল ফ্রি-র্যাডিকেল ও কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে ।
৩ । ক্যানসার প্রতিরোধ করে: ভিটামিন-ই-এর বড় উৎস হচ্ছে কালো জলপাই ; যা ফ্রি-র্যাডিকেলকে হটাতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে । এই ভিটামিন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে আসে।
৪ । ত্বক ও চুলের যত্নে রাখে ভুমিকা: ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে কালো জলপাইয়ের তেলে, যা ত্বক ও চুলের যত্নে ফলফ্রসু । চুলের গোড়া মজবুত করতে জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়ায় ব্যবহার করা হয় । এতে চুল পড়ার সমস্যা যেমন দূর হয়। তেমনি জলপাইয়ের তেল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকেও ত্বককে রাখে সুরক্ষিত ।
৫ । হাড়ের ক্ষয়রোধ করে: মনো স্যাচুরেটেড চর্বি আছে জলপাইয়ে যেটি প্রদাহবিরোধী একটি উপাদান। এ ছাড়াও বয়সের ভারে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয়। যেটা প্রতিরোধ করতে অবদান রাখে এই জলপাইয়ের তেল ।
৬ । লৌহের ঘাটতি রোধ করে: লৌহের বড় একটি উৎস হচ্ছে কালো জলপাই । যে লৌহ আবার সরবারাহ করে আমাদের প্রাণের অক্সিজেন । সুতরাং শরীরে লৌহের ঘাটতি হলে অক্সিজেনেরও ঘাটতি হয় । দেখা দেয় শারীরিক দূর্বলতা ।
৭ চোখের যত্নে: জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন-এ । আর এই ভিটামিন-এ চোখের জন্য ভালো একটি টনিক । অনেক আছেন যারা আলো ও অন্ধকারে চোখের সংবেদনশীলতায় ভুগেন, তাঁদের জন্য ওষুধে হিসাবে কাজ করে এই জলপাই। শুধুকি তাই জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় সংক্রমণজনিত সমস্যা এগুলোও প্রতিরোধ করে এই মুখরোচক জলাপাই ।
৮ । পিত্তথলির পাথর রোধে: এই জলপাই নিয়মিত খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে । যারফলে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায় ।
৯ । ডায়াবেটিস রোধে: রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণেও জলপাই বিশেষ ভুমিকা রাখে । এতে ডায়াবেটিসও থাকে নিয়ন্ত্রণে ।
১০ । রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে: সর্বোপরি জলপাই যে কাজটা করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । ফলে সর্দি, জ্বর ইত্যাদি দূরে রাখে । সেই সাথে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে দেয় ।
কথায় আছে না এমনিতে নাচুনি বুড়ি, তার উপর ঢোলের বারি । এমনিতেই জিভে পানি আসা লোভনীয় ফল তার উপর এতো এতো উপকারীতা । না খেয়ে আর থাকা যায় । পুরুষ হয়েছি তাতে কি । এই আমিও একটা খেয়ে নিলাম ।
Post a Comment