ব্লাড প্রেসার না বাড়িয়ে চা-কফি খাওয়ার ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল

চা কিংবা কফি এই দু'টো পানীয়ের প্রতি ভালোবাসা যেন আমাদের রক্তে মিশে আছে। সকালের শুরু হোক বা ক্লান্ত বিকেল, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি ছাড়া যেন চলেই না। কিন্তু এই প্রিয় অভ্যাসটিই অনেক সময় ব্লাড প্রেসারের শত্রুতে পরিণত হয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হূদরোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তবে কি চা-কফির স্বাদ আর অনুভূতিকে আমাদের চিরবিদায় জানাতে হবে? একদমই না! বিজ্ঞান বলছে সঠিক কৌশল জানলে আপনি চাইলে চা-কফি উপভোগ করতেই পারেন, তাও আবার ব্লাড প্রেসার না বাড়িয়ে। আজকের লেখাতে আমরা জানব ৫টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশল, যেগুলো মেনে চললে আপনি নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারবেন প্রিয় চা কিংবা কফি—তাও আবার ব্লাড প্রেসার না বাড়িয়ে। তো চলুন শুরু করা যাক । 


ব্লাড প্রেসার না বাড়িয়ে চা-কফি খাওয়ার ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল

১: চা কফি খাওয়ার সঠিক সময় ঠিক করুন 

বেশিরভাগ মানুষ সকালে ঘুম ভাঙতেই কফির দিকে হাত বাড়ান। কিন্তু জানেন কি, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই কর্টিসল নামক হরমোন বেশি উৎপন্ন করে, যা আমাদের জাগিয়ে তোলে? এই সময় চা-কফি খেলেই হরমোন ব্যালান্সে সমস্যা হয় এবং ব্লাড প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। চা বা কফি খাওয়ার সেরা সময় হলো সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। এতে শরীর ক্যাফেইন ভালোভাবে গ্রহণ করে এবং প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

২: দুধ বা বাদাম দুধ মেশান 

চা বা কফিতে দুধ মেশালে কি হয়? দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন শরীরের ক্যাফেইন অ্যাবজরপশন কমিয়ে দেয়। এর ফলে ব্লাড প্রেসারে তীব্র প্রভাব পড়ে না। এছাড়া যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তারা চাইলে আলমন্ড মিল্ক বা ওট মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন, যেগুলো হার্ট-ফ্রেন্ডলি।এই ছোট্ট পরিবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে আপনার রক্তচাপে।

৩: গ্রিন টি বা হারবাল বিকল্প বেছে নিন 

সব ধরনের চা বা কফিতে ক্যাফেইনের মাত্রা সমান থাকেনা । গ্রিন টি, হোয়াইট টি কিংবা হারবাল টি-তে ক্যাফেইনের মাত্রা অনেক কম। যেমন এক কাপ গ্রিন টি-তে থাকে মাত্র ২০–৩০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, যেখানে কফিতে ৯০–১০০ মিলিগ্রাম । এছাড়া গ্রিন টি-তে থাকে এল-থিয়ানাইন নামক এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন অন্তত একবেলা গ্রিন টি রাখুন, আর এতে আপনার হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পাবে ।

৪: চা-কফি খাওয়ার আগে পানি পান করুন 

অনেকেই খালি পেটে চা বা কফি খান। এটা একটা মারাত্মক ভুল। খালি পেটে ক্যাফেইন শরীরে তাড়াতাড়ি অ্যাবজর্ভ হয় এবং ব্লাড প্রেসার হুট করে বেড়ে যেতে পারে। চা-কফি খাওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে, ক্যাফেইন শোষণের গতি কমবে এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫: ক্যাফেইন সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৩০০–৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন নিরাপদ। অর্থাৎ, দিনে সর্বোচ্চ ২–৩ কাপ কফি অথবা ৩–৪ কাপ চা খেলেই যথেষ্ট। এছাড়া মনে রাখবেন, চকলেট, সফট ড্রিংকস বা এনার্জি ড্রিংকেও থাকে ক্যাফেইন । তাই শুধুই চা বা কফিকে দোষ না দিয়ে, আপনি মোট কতবার গ্রহণ করছেন সেটার হিসাব করে সীমা মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।


আজকে আমরা জানলাম কীভাবে চা বা কফি খেয়েও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়—তাও একেবারে বৈজ্ঞানিকভাবে। এই ৫টি কৌশল যদি আপনি নিয়মিত মেনে চলেন, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ আর চা-কফির মাঝে কোনো বিরোধ থাকবে না। যদি আপনার পরিচিত কেউ ব্লাড প্রেসারে ভোগেন কিন্তু চা-কফি ছাড়তে পারেন না, তাহলে এই লেখাটি তার সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করতে পারেন । আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.