লো -প্রেসার থেকে মুক্তি পাবার ঘরোয়া উপায়

 আপনি কি প্রায়ই মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ঘুম ঘুম ভাব কিংবা হঠাৎ দাঁড়ালে চোখে অন্ধকার দেখতে পান? হতে পারে আপনি লো ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন, যাকে বাংলায় আমরা বলি “কম রক্তচাপ”।

আজকে আমরা আলোচনা করবো—

১ । লো-প্রেসার কী ?

২ । লো-প্রেসার এর কারণ

৩ । লো-প্রেসার এর লক্ষণ

৪ । লো-প্রেসার এর ঝুঁকি

৫ । এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে—লো প্রেসার থেকে মুক্তি পাবার ২০টি ঘরোয়া উপায়।

লো ব্লাড প্রেসার কী?

রক্তচাপ হচ্ছে সেই চাপ, যার মাধ্যমে রক্ত আমাদের ধমনির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়।
স্বাভাবিক রক্তচাপ সাধারণত হয় ১২০/৮০ mmHg। কিন্তু যখন এটি ৯০/৬০ mmHg বা তার নিচে নেমে যায়, তখন তাকে বলা হয় লো ব্লাড প্রেসার।

লো প্রেসারের লক্ষণ

লো প্রেসারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—

১ । মাথা ঘোরা

২ । দুর্বলতা বা অবসাদ

৩ । চোখে অন্ধকার দেখা

৪ । বমি বমি ভাব

৫ । একাগ্রতা কমে যাওয়া

৬ । বুক ধড়ফড় করা

৭ । ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে ত্বক

৮ । শ্বাসকষ্ট

 ৯ । অনিদ্রা

১০ । হতাশা

এই লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।

লো প্রেসারের কারণ

লো প্রেসার হতে পারে বিভিন্ন কারণে:

  • পানিশূন্যতা (Dehydration)

  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

  • ইনফেকশন

  • দীর্ঘ সময় উপবাস

  • গর্ভাবস্থা

  • থাইরয়েডের সমস্যা

  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা

  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ

লো প্রেসারের ঝুঁকি

আপনার লো প্রেসার যদি বারবার হয়ে থাকে, তবে এর ফলে হতে পারে:

  • ব্রেইন অক্সিজেনেশন কমে যাওয়া

  • চেতনা হারানো

  • ফ্র্যাকচার বা আঘাত

  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি

  • মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে দীর্ঘমেয়াদে

ঘরোয়া উপায়ে লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ২০টি উপায়

১ । পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পানিশূন্যতা লো প্রেসারের অন্যতম বড় কারণ। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। আপনি সকালে খালি পেটে এক গ্লাস লবণ-পানি পান করতে পারেন এতে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ কিছুটা বাড়্তে পারে ।

২ । লবণ খান সঠিকভাবে

নিয়মিত স্বল্পমাত্রায় লবণ রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লবণ খাওয়া উচিত নয়।  লেবুর রসে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করতে পারেন।

৩ । কলা

কলায় রয়েছে পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক শর্করা, যা লো প্রেসার রোধে সহায়ক। সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন সকালে কলা খেতে পারেন ।

৪ । ফলের রস

কমলা, আঙুর, আপেল ইত্যাদির প্রাকৃতিক রস রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায়। তাজা রস ব্যবহার করুন, চিনি দিয়ে ।

৫ । মুনা ও কাঠবাদাম

বাদামে থাকা ওমেগা-৩ এবং প্রোটিন রক্তসঞ্চালনে সহায়তা করে। সকালে ৪-৫টি ভেজানো কাঠবাদাম বা মুনা খাওয়া যেতে পারে।

৬ । যোগব্যায়াম ও ধ্যান

সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সকালে অন্তত ১৫ মিনিট প্রানায়াম করুন। ধ্যান মানসিক চাপ কমায়।

৭ ।  চা ও কফি

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তবে দিনে একাধিক কাপ না খাওয়াই ভালো, কারণ এটি ডিহাইড্রেশনও বাড়াতে পারে।

৮ । রসুন

প্রাকৃতিকভাবে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন।

৯ । আলু

আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট। এটি শক্তি বাড়ায় ও লো প্রেসার রোধ করে। সেদ্ধ বা ভাজা আলু নয়, খেতে পারেন ভাপানো আলু ।

১০ । ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটের ফ্ল্যাভনয়েডস রক্তনালী প্রশস্ত করে। তবে চিনি কম থাকা চকলেট বেছে নিন।

১১ । ডিম

প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম লো প্রেসারে ভীষণ কার্যকর। সকালে সিদ্ধ ডিম বা পোচ খেতে পারেন।

১২ । মাছ ও মাংস

প্রোটিন, আয়রন ও মিনারেলস রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে। তবে লাল মাংস কম খান, মুরগি বা সামুদ্রিক মাছ বেছে নিন।

১৩ ।  ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক

ORS, ডাবের পানি কিংবা ঘরোয়া ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক রক্তে স্যালাইন ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।

১৪ । ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয়া

হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। এতে নার্ভ সিস্টেম রিফ্রেশ হয়।

১৫ । সঠিক ঘুম

ঘুমের অভাবে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।

১৬ । আস্তে উঠে দাঁড়ান

হঠাৎ করে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়তে পারেন। তাই ধীরে উঠে দাঁড়ান।

১৭ । তুলসী পাতার রস

তুলসী পাতা ইমিউন সিস্টেম শক্ত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সকালে ৫টি পাতা চিবিয়ে খান অথবা মধুর সাথে রস পান করুন।

১৮ । শাকসবজি ও শস্য

গাজর, পালং শাক, ব্রকলি, ওটস, ব্রাউন রাইস—এসব খাবার লো প্রেসারে সহায়ক।

 ১৯ । ব্ল্যাক সল্ট লেমনেড

গরমকালে শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে গেলে প্রেসার পড়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে ব্ল্যাক সল্ট ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

২০ । দই বা ঘোল

দই হজমে সাহায্য করে, হালকা লবণ দিয়ে তৈরি ঘোল ডিহাইড্রেশন দূর করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন? 

যদি আপনার প্রেসার নিয়মিত ৯০/৬০ mmHg এর নিচে থাকে, এবং ঘন ঘন উপসর্গ দেখা দেয় যেমন:

  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

  • বুক ধড়ফড়

  • অস্বাভাবিক ক্লান্তি

দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়েট চার্ট (লো প্রেসার রোগীর জন্য)

সকাল: ১ গ্লাস লেবু-পানি + ১ কলা + ১ সিদ্ধ ডিম
ব্রেকফাস্ট: ওটস + দুধ + বাদাম
মধ্যাহ্নভোজ: ভাত, ডাল, ভাপানো সবজি, মুরগির মাংস
সন্ধ্যা: ফলের রস + বিস্কুট
রাত: রুটি + ভাজি + ঘোল

লো প্রেসারকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যদি আমরা সময়মতো লক্ষণ চিনতে পারি এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবে উপসর্গ যদি ঘন ঘন দেখা দেয়, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। মনে রাখবেন—সুস্থতা আপনার নিজের হাতে।

নিয়মিত হাটুন সুস্থ্য থাকুন । তো আজ এ পর্যন্তই ।  আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.