কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সাতটি সহজ উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য—একটি অস্বস্তিকর ও প্রচণ্ড বিরক্তিকর সমস্যা, যা আজকাল প্রায় সব বয়সী মানুষকেই ভোগাচ্ছে। অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পানি কম পান করার কারণে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে শুধু অস্বস্তি নয়, পাইলস, ফিশার, এমনকি কোলন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। তাই সময়মতো এর প্রতিকার জানা ও গ্রহণ করাটা খুবই জরুরি। সুখবর হলো, কিছু সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় মেনে চললেই আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরক্তিকর এই সমস্যাকে বিদায় জানাতে পারেন। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো—"কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সাতটি সহজ উপায়", যা আপনি ঘরেই পালন করতে পারবেন, ওষুধ ছাড়াই!
১. টয়লেট টুলের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার
বর্তমানে বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে হাই কমোডই ব্যবহৃত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, মলত্যাগের ক্ষেত্রে স্কোয়াটিং পজিশন বা নিচু হয়ে বসা অনেক বেশি কার্যকর, যেটা লো প্যানে বসলে স্বাভাবিকভাবেই হয়। কিন্তু ঘরে যদি কেবল হাই কমোড থাকে, তখন কী করবেন? সমাধান হতে পারে একটি ছোট টুল। টয়লেট টুল নামের এই জিনিসটি কমোডে বসে পা রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়, যাতে বসার অবস্থান কিছুটা স্কোয়াটিংয়ের মতো হয়। এটি অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। না থাকলে প্লাস্টিক বা কাঠের তৈরি সাধারণ টুলও চলবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য, যাদের পা কমোডে বসে ঝুলে থাকে, এটি খুবই কার্যকর হতে পারে। সঠিক ভঙ্গিতে বসলে মলত্যাগ সহজ হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও কমে আসে।
২. প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করুন
নিয়মিত হাঁটা শুধু শরীরের জন্য নয়, মন ভালো রাখারও বড় ওষুধ। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সংযোগ আছে। সকালে ১৫-২০ মিনিটের হালকা হাঁটা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন পোঁছায়। এতে মন চাঙা থাকে এবং অন্ত্রের কার্যক্রমও সঠিকভাবে চলে। হাঁটার ফলে অন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ বাড়ে, যা মল চলাচলকে সহজ করে তোলে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটিতে বরাদ্দ রাখুন।
৩. প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন
প্রোবায়োটিক হচ্ছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। হার্ভার্ড হেলথ প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)-এ ভোগা ব্যক্তিদের জন্য প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল অনেক সময় কার্যকর হয়। এসব ক্যাপসুল অনেকটা ঘন টক দইয়ের মতো—যার মধ্যে স্বাস্থ্যবান ব্যাকটেরিয়ার ঘনঘটা থাকে। নিয়মিত প্রোবায়োটিক গ্রহণে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে আসে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করাই উত্তম।
৪. ম্যাগনেশিয়াম ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট
ম্যাগনেশিয়াম শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যক খনিজ। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, ম্যাগনেশিয়াম সাইট্রেট অন্ত্রে পানি ধরে রাখে, ফলে অন্ত্র শিথিল হয় এবং মলত্যাগ সহজ হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ভিটামিন সি, বি৫, বি১২ ও বি১-ও সহায়ক। এসব উপাদান মল নরম রাখতে এবং অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা প্রতিদিন ফলমূল, বাদাম ও শাকসবজি খান না, তাঁদের জন্য এই সাপ্লিমেন্ট হতে পারে কার্যকর বিকল্প।
৫. প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন
আলুর চিপস বা হোয়াইট ব্রেডের মতো উচ্চ কার্বোহাইড্রেট খাবার হজমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব খাবার অন্ত্রের গতি কমিয়ে দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে। বরং বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, বাদাম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, জলপাই তেলের উপকারী চর্বি অন্ত্রে একটি সুরক্ষা আবরণ তৈরি করে, যা মলের গতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
৬. দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে দাঁড়িয়ে থাকুন
যাঁরা দিনে অধিকাংশ সময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য কিছু সময় অন্তর দাঁড়ানো অপরিহার্য। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার দাঁড়ালে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং বিপাকক্রিয়া সচল থাকে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে, সেই সঙ্গে হৃদরোগ, স্থূলতা, ও ক্যানসারের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। তাই চেয়ারে দীর্ঘসময় বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাজ করুন।
৭. সকালে লেবু-পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন
এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে আধা লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন। এটি আপনার হজমপ্রক্রিয়াকে জাগিয়ে তোলে। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড ও ঠান্ডা পানি একত্রে অন্ত্রের গতি বাড়ায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। চাইলে দিনে দুবারও খেতে পারেন। এতে করে আপনার পেট পরিষ্কার থাকবে এবং আপনি নিজেকে হালকা অনুভব করবেন।
এই সাতটি উপায় অনুসরণ করলে ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও হালকা শরীরচর্চা—এই তিনটি অভ্যাসই হতে পারে আপনার পরিপাক স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি।
নিয়মিত হাটুন সুস্থ্য থাকুন । তো আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment