অজান্তেই ব্লাড সুগার বাড়াচ্ছে আপনার এই ৭ অভ্যাস

আপনি নিশ্চিন্তে জীবন কাটাচ্ছেন, কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে — কেন হচ্ছে এমনটা? আপনি হয়তো নিয়মিত চিনি খাচ্ছেন না, মিষ্টিও এড়িয়ে চলছেন। তবু ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস ধরা পড়ছে হঠাৎ করে। কেন? কারণ কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস, যেগুলোকে আপনি একেবারে সাধারণ ও নির্দোষ মনে করেন, সেগুলোই অজান্তেই আপনার ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত!

আজকের এই আলাপে আমরা জানব এমনই ৭টি অভ্যাসের কথা, যা আপনি প্রতিদিনই করে যাচ্ছেন — কিন্তু সেগুলোর প্রতিটির পেছনে লুকিয়ে আছে বিপজ্জনক সত্য। চলুন, জেনে নিই কোন অভ্যাসগুলো আপনার অজান্তেই আপনাকে ডায়াবেটিসের পথে ঠেলে দিচ্ছে । 

১ । অপর্যাপ্ত ঘুমানো
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ইনসুলিন ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দেয়। ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুমানোর আগে মুঠোফোন বা টিভির পর্দা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

২ । পানি কম পান করা
শরীরে পানির অভাব থাকলে রক্তে শর্করার ঘনত্ব বেড়ে যায়। পানিশূন্যতা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। গরমের দিনে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন, যাতে প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে পানি খেতে পারেন।

৩ ।  ওষুধ খাওয়ায় অনিয়ম
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না এবং ওষুধের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হলেও চিকিৎসকের মতামত অবশ্যই প্রয়োজন।

৪ । অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া
অনেকে কাজের চাপে বা ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার এড়িয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় না খেলে লিভার সঞ্চিত শর্করা রক্তে ছেড়ে দেয়, ফলে বেড়ে যায় গ্লুকোজের মাত্রা। তাই সময়মতো খাওয়াদাওয়া করুন এবং খাবারে আঁশ, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের সঠিক ভারসাম্য রাখুন।

৫ । কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার
চিনি না খেয়ে অনেকেই ডায়েট মিষ্টি বা সুইটনার বেছে নেন। কিন্তু কৃত্রিম মিষ্টি ইনসুলিনের ওঠানামা ঘটাতে পারে। এতে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই এ ধরনের বিকল্প ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।

৬ । প্রসেসড খাবারের লুকানো চিনি
অনেক প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। ‘লো ফ্যাট’ বা ‘ডায়েট’ ট্যাগ থাকা সত্ত্বেও এতে শর্করার পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই যেকোনো পণ্য কেনার আগে তার উপাদান তালিকা পড়ে নিন।

৭ । অতিরিক্ত এক্সারসাইজ
ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো হলেও, পুষ্টির অভাবে অতিরিক্ত কসরত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিক পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করে ব্যায়াম করুন এবং খুব ক্লান্তিকর এক্সারসাইজ এড়িয়ে চলুন।

আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:

১ । মানসিক চাপ
চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল নামের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায়। তাই স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হালকা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

২ । শরীরের অসুস্থতা
সাধারণ জ্বর, সর্দি কিংবা সংক্রমণ থেকেও ব্লাড সুগার বাড়তে পারে। কারণ অসুস্থতার সময় শরীর স্ট্রেস হরমোন বাড়ায়, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে। তাই অসুস্থ থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত চেক করুন।

৩ । হরমোনের ওঠানামা
নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকচক্র, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা রক্তে চিনির পরিমাণে প্রভাব ফেলে। এই সময়গুলোতে শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলো একটু বদলালেই আপনি সহজেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন । স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা শুরু হোক সচেতনতা দিয়েই। 

অলস অভ্যাস ছেড়ে দিন । হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করুন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে নতুন কোন বিষয়ে । আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.