আলু খোসাসহ খাবেন নাকি খোসা ছাড়া?
বর্তমান সময়ে আলু আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি অপরিহার্য উপাদান । আজকাল আমারা প্রায় প্রত্যকদিন কোন না কোন ভাবে আলু খেয়ে থাকি । আলু ভর্তা বানিয়ে খাই নয়তো আলুর চপ বানিয়ে খাই নয়তো কোন না কোন তরকারীতে আমরা আলু খেয়ে থাকি । আলু ছাড়া আমাদের রান্না হয়না বললেই চলে । কিন্তু এই আলু আমরা খোসাসহ খাব, নাকি খোসা ছাড়া খাব ? আলুর খোসাতে কি নুন্যতম কোনো পুষ্টিগুণ আছে ? আমার মতো হয়তো আপনার মনেও কখনও উকি দিতে পারে এমন প্রশ্ন । তো আজকের লেখাতে এই প্রশ্নের উত্তর আমি আপনাদের জানাতে চলেছি । কাছে এসে বসুন মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকুন । আলুতে যেমন পুষ্টিগুণ আছে, তেমনি আলুর খোসারও রয়েছে অনন্য, অসাধারণ পুষ্টিগুণ। যেই আলুর খোসা আমরা ‘সযত্নে’ ময়লার ঝুড়িতে বা ডাস্টবিনে ফেলে দিই, আজকে সেই আলুর খোসার অজানা, চমতকার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি ।
আলুর খোসার চমৎকার উপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ
১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
আলুর খোসায় আছে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার, যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখতে ভুমিকা রাখে ।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর
আলুর খোসা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের ফাইবারের চমৎকার উৎস। দ্রবণীয় ফাইবার আমাদের কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তে শর্করার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর অদ্রবণীয় ফাইবার আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করে ।
৩. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে
আলুর খোসাতে আছে ফ্লাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড এবং ফিনোলিক যৌগ, এগুলো সব হচ্ছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এগুলো আমাদের দেহের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলস দূর করে হার্টের রোগ, ক্যানসার এবং স্নায়ুজনিত রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৪. প্রদাহ কমায়
আলুর খোসায় থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ক্যাফেইক অ্যাসিড প্রদাহবিরোধী গুণসম্পন্ন, ফলে এটি আমাদের আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত রোগের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
৫. হজমশক্তি ও মাইক্রোবায়োমের উন্নতি ঘটায়
আলুর খোসার ফাইবার আমাদের দেহে পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় । প্রোবায়োটিকের মতো উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে পুষ্টি জোগায়। মাইক্রোবায়োম আমাদের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে খাদ্যের জটিল উপাদান ভেঙে সহজপাচ্য করে তোলে ।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে
আলুর খোসার ফাইবার আমাদের পেট ভরা রাখে, যার ফলে আমাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এর রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং জমাট বাঁধা চর্বি কমাতেও দারুনভাবে কাজ করে ।
৭. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
এতে থাকে পটাশিয়াম যা আমাদের রক্তচাপ কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এর ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তনালির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ।
৮. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
আলুর খোসায় থাকা ফাইবার রক্তপ্রবাহে গ্লুকোজের শোষণের গতি কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এই আলুর খোসা বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা এই রোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য খুবই উপকারী।
৯. ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
আলুর খোসায় থাকে ক্যারোটিনয়েড এবং ভিটামিন সি, যেটা ত্বককে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। আলুর খোসা আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে ।
এ ছাড়াও আপনাদের বলে রাখি, আলুর বেশির ভাগ পুষ্টি থাকে খোসার ঠিক নিচে। তাই আলুর খোসা যদি না-ও খান, অন্তত খোসাসহ আলু রান্না করে আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে তারপর আপনি খেতে পারেন।
আজ থেকেই আপনি আলু খোসা সহ খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন ।
Post a Comment