কেন কাঁদবেন? জেনে নিন কান্নার ১০ উপকারিতা

পাঠক আমরা সিনেমা-নাটকে অভিনেতা বা অভিনেত্রীদেরকে অনেক সময় কাঁদতে দেখি । কিন্তু এরা কি আসলেই কাঁদেন ? না এরা আসলেই কাঁদেন না । এরা রোজগারের জন্যে কান্নার অভিনয় করেন । অর্থাৎ এরা এই কান্নার জন্যেও টাকা পেয়ে থাকেন । কিন্তু বাস্তবেও যদি আমরা কান্না করলে টাকা পেতাম তাহলে কেমন হোত । না বাস্তবে সেটা সম্ভব না । তবে আশার কথা হচ্ছে, কান্নার জন্য অর্থ প্রাপ্তি না ঘটলেও কান্নারও যে কিছু প্রাপ্তি বা উপকারিতা আছে সেটা নিয়েই আজকের আলাপ । আশা করছি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাবো ।

ছোট বেলায় বা জীবনের কোন এক পর্যায়ে মায়ের বকুনি কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক কান্না করেন নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায় । কিন্তু এই কান্নারও যে কিছু প্রাপ্তি বা উপকারিতা আছে সেটা আমরা কজনই জানি ।

কান্না মানুষের আবেগ প্রকা‌শের একটা মাধ্যম বা ভাষা। আবেগতা‌ড়িত হ‌য়ে কান্নাকা‌টি ক‌রেন‌নি, এ রকম মানুষ আপনি পাবেন ? না এরকম মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন। মাঝেম‌ধ্যেই কান্নাকাটি করাটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা । এক সমিক্ষায় দেখা গে‌ছে যে মেয়েরা প্রতি মাসে কাদেন পাঁচবার আর পুরু‌ষেরা কাঁদেন একবার। এই পার্থক্যটা হয়ে থাকে সামা‌জিক ও লৈ‌ঙ্গিক কার‌ণে । 

কিন্তু মানুষ কেন কাঁদে?

মানুষ বিভিন্ন কারণেই কাঁদতে পারে, কিন্তু আসল কারণটা হ‌চ্ছে আবেগ। 

১. শারী‌রিক কারণে মানুষ কাঁদে 

কান্না আমাদের শরীরকে চাপের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে, স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে মানসিক ভারসাম্য পুনরুজ্জীবিত করে ।

২. মনস্তাত্ত্বিক কারণে মানুষ কাঁদে 

কান্নার মাধ্যমে মানুষ দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, হতাশার মতো আবেগগুলো প্রকাশ ক‌রে থাকে । মানুষ য‌দি না কাঁদতো তাহ‌লে আবেগগু‌লো চাপা থেকে যেতো যার ফলে মানুষ বি‌ভিন্ন জ‌টিলতায় ভুগত।

৩. সামাজিক কারণে মানুষ কাঁদে 

আমরা মু‌খে কিছু না বল‌লেও কান্নার মাধ্যমে অন্যদের কাছে আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি, সান্ত্বনা এগুলো প্রকাশ কর‌তে পা‌রি। এতে হয়কি! আমাদের সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়।

আসুন এখন আমরা কান্নার উপকারিতা গুলো জেনে নেই ।

কান্নার ১০টি উপকারিতা

ম‌নো‌বি‌দেরা বলে থাকেন কান্নাকা‌টি করাটা ‘স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গুলোর একটি’। কান্নার পরে আমরা বেশ ভালো ফিল করি। এর কারণ, কান্না আমাদের আবেগ ও চাপ থে‌কে মুক্তি দেয় । কান্নার উপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ

১. কান্না আমাদের প্রশান্তি এনে দেয়

আপনি চিৎকার ক‌রে কাঁদুন বা নীর‌বে—যেভাবেই কান্নাকা‌টি করুন না কেন, দেখ‌বেন আপনার মনে একটা ভালো লাগা ভাব কাজ করছে । কারণ, কান্না আপনা‌কে প্রশান্তি এনে দি‌তে পা‌রে। কান্না আমা‌দের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে জাগিয়ে তোলে । যা স্নায়ু শিথিল করণের জন্য দায়ী বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ, হজম ও সেরে ওঠার স‌ঙ্গে জ‌ড়িত। আমাদের কান্নার ফলে এন্ডোরফিন বা ‘সুখী হরমোন’ নিঃসৃত হয়, যা আমাদের ভেতর এক ধরনের ভালো লাগা ভালো লাগা ভাব এনে দেয় । 

২. ব্যথা উপশম করে

আগেই বলেছি কান্নাকাটি করার ফ‌লে শরীরে এন্ডোরফিন বা সুখি হরমোন উৎপন্ন হয়, যা কিছু কিছু ব্যথাও দূর করে দেয়। কান্নাকা‌টি আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকেও সক্রিয় করে ফলে শিথিলতা বাড়ে, স্ট্রেস বা চাপ কমে যায় এবং ব্যথাও দূর হয়ে যায় ।

৩. মুড ভা‌লো করে

ম‌নো‌বিদরা ব‌লে থাকেন, কান্না আবেগ নিয়ন্ত্রন ক‌রে আপনার মুড ভা‌লো করে দি‌তে সাহায্য করে। আমরা যখন কান্না করি তখন আমাদের দেহের ক্ষতিকর হরমোনগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যায় ফলে আমরা ফুরফুরে হয়ে ওঠি । শুধু কি তাই ? যখন আমরা কান্নাকা‌টি করি তখন দ্রুত নিশ্বাস নিই, ফলে আমাদের মস্তিষ্ক ‘ঠান্ডা’ হ‌য় এবং অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বেড়ে যায়।

৪. চাপ প্রশমিত করে

কান্না কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন বা রাসায়নিকগুলোকে আপনাদের দেহ থেকে বের করে দেয়, ফলে আপনার শরীর ধু‌য়েমুছে ‌ডিট‌ক্সিফাই হয়ে যায় । আর এতে আপনার মান‌সিক দু‌শ্চিন্তা হামেশাই দূর হ‌য়ে যায়।

৫. এনে দেয় প্রশান্তির ঘুম

আপনি যদি অনেকক্ষণ ধ‌রে কান্নাকা‌টি করেন তাহলে আপনার শরী‌রে বি‌ভিন্ন হর‌মোন নিঃসরণ হয় এবং সেই সাথে প্রচুর শ‌ক্তি ক্ষয় হয়। মা‌ঝেমধ্যে পা‌নির অভাব দেখা দেয়। যার ফ‌লে আপনার ম‌াথা ঠান্ডা হ‌য়ে যায় এবং আপনি একধর‌নের প্রশা‌ন্তি বোধ করেন, আর এটা আপনাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুমাতে ভুমিকা রাখে । সুতরাং  ঘুমানোর আগে মা‌ঝেম‌ধ্যে আপনি একটু আধটু কান্নাকাটি করতেই পা‌রেন!

৬. ব্যাকটেরিয়ার বিরু‌দ্ধে লড়াই করে

আমাদের চো‌খের পা‌নি‌তে লাইসোজাইম নামক একধর‌নের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম বিদ্যমান । এই লাইসোজাইম ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে আপনার চোখকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে চোখ রাখে নিরাপদ ।

৭. চোখ‌ সুস্থ রাখে, উন্নত করে দৃষ্টিশক্তি

যখন আপনি কান্নাকা‌টি করেন তখন আপনার চোখ স্বাভাবিকভাবে পি‌চ্ছিল থাকে, যা আপনার চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, কর্নিয়াকে আর্দ্র ও পরিষ্কার রাখে । ফলে আপনার চোখের সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি অনেক কমে যায় । আপনার চোখের জল ধুলাবালু ও অন্য বিরক্তিকর উপাদানগুলো ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয় । এ ছাড়াও কান্না আমাদের নেত্রনালি সতেজ রেখে চোখকে প্রশান্তি এনে দেয় ।

৮. মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে

অনেক সময় আত্বীয়-স্বজনের সাথে ভুল বোঝাবুঝি বা সম্পর্ক নষ্ট হলে আমরা কান্নায় ভেঙে প‌ড়ি। এ ধর‌নের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সাহায্য করে কান্না । এই সময়টায় আমাদের মধ্যে অনেক সময় উত্তেজনা ও চাপ কাজ ক‌রে। আর এগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ ক‌রে আমাদের মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে এই কান্না।

৯.  বাচ্চাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ও ঘুমাতে সাহায্য করে

আপনার বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে কি আপনার ভা‌লো লা‌গে? কিন্তু কান্নাকা‌টি শিশুদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে শিশু‌দের শ্বাসনালি পরিষ্কার হয়। তারা বে‌শি বে‌শি অক্সিজেন নি‌তে পারে। এতে তার কষ্ট কমে যায় । ‘রিদমিক বা ছন্দোময়’ কান্না শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বড়‌দের কান্নাকাটি যেমন চাপ ও দুশ্চিন্তা কমায় তেমনি শিশু‌দেরও চাপ ও দুশ্চিন্তা ক‌মিয়ে দেয়, এর ফ‌লে শিশু রিল্যাক্সড হয় । ঘুমটাও হয় ফুরফুরে দারুন ফ্রেশ ।

১০. সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে

আমরা মু‌খে না বললেও কান্নার মাধ্যমে অন্যদের কাছে আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি বা সান্ত্বনা প্রকাশ কর‌তে পা‌রি। ফলে এতে আমাদের সামাজিক বন্ধন আরোও শক্তিশালী হয়।
কিন্তু আপনি যদি প্রায়ই কান্নাকাটি করেন আর এই কান্নাকাটি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে বাধাগ্রস্থ করে বা এটি যদি আপনার উদ্বেগের কারণ হয়, তাহলে আবশ্যই আবশ্যই আপনাকে একজন মনো‌বি‌দের পরামর্শ নেয়ে উচিৎ ।

প্রিয় দর্শক আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে । আল্লাহ হাফেজ ।

No comments

Powered by Blogger.