ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকায় চিড়া

বর্তমান বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে । তাই প্রতিনিয়ত মানুষ তৎপর হয়ে উঠছে এই ডায়াবেটিস ঠেকাতে । ডায়াবেটিসকে বসে আনার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে মেডিসিন । কিন্তু এই মেডিসিনের আছে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া । তাই মানুষ ঝুঁকছে মেডিসিন ছাড়াই কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় । তাই মানুষের প্রতিনিয়ত প্রশ্ন খাবার দিয়ে কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা যায় ? তেমনি একটি জিজ্ঞাসা চিড়া কি ডায়াবেটিস কমাতে বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ?

আজকের আলাপে আমি আপনাদের সেই প্রশ্ন, চিড়া কি ব্লাড সুয়াগার বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে ? এই প্রশ্নের বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ । শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন আর জেনে নিন বিস্তারিত । তো চলুন শুরু করা যাক ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চালের থেকে চিড়া কিছুটা উত্তম । চালের দুটি আংশ । একটি চালের(তুষ) পৃষ্ঠদেশ বা বাইরের অংশ বা তুষ, যেটাতে থাকে চালের সবথেকে পুষ্টিকর উপাদান বা এন্টিডায়াবেটিক উপাদান । আর একটি এন্ডোস্পার্ম বা শস্য অংশ । এই অংশে থাকে মূলত কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি । চালকে যখন আকর্শনীয় করে গড়ে তোলা হয়, তখন একে পোলিশ করে নিতে হয় । ফলে আমাদের এই চাল পোলিশের কারণে এটি ডায়াবেটিস বান্ধব পুষ্টিকর উপাদান এবং এন্টিডায়াবেটিক উপাদান হারিয়ে ফেলে । তাই এই চাল ডায়াবেটিসের জন্য হয়ে যায় ক্ষতিকর । ব্লাড সুগার দেয় বাড়িয়ে । এই জন্য পোলিশ করা রিফাইন চালকে ডায়াবেটিস প্যাসেন্টদের জন্য বিষ বলা হয়ে থাকে ।

তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাবার মেনুতে সাদা পলিশ করা রিফাইন চালের পরিবর্তে ব্রাউন চাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । কিন্তু এই ব্রাউন চালের দাম তুলনামূলক বেশি এবং এটি সহজ লভ্য নয় । তাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে এই ব্রাউন চাল । আর এ জন্যেই মানুষ চালের পরিবর্তে তুলনামূলক সস্তা চিড়ার কথা ভাবছে । চিড়াকে সাধারণত পোলিশ করা হয় না বললেই চলে । এই জন্যে চিড়াতে ডায়াবেটিস বান্ধব উপাদান গুলি থাকার সম্ভাবনা বেশি । এ কারণে অনেকেই মনে করেন চিড়া ব্রাউন চালের থেকে বেশি ডায়াবেটিস বান্ধব । আসলেই কি চিড়া ডায়াবেটিস বান্ধব ?

চিড়া আপনার সাদা চকচকে চালের থেকে ভালো ডায়াবেটিস বান্ধব । তাই আপনি ব্রাউন চালের বিকল্প হিসাবে খেতে পারেন । ১০০ গ্রাম সাদা চালে ফাইবার থাকে ১.৩ গ্রাম । আর প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়াতে ফাইবার আছে ৩.৫ গ্রাম । এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি চিড়াতে আড়াই গুণেরও বেশি ফাইবার পাচ্ছেন । সুতরাং অবশ্ব্যই চিড়া সাদা চালের থেকে ব্লাড গ্লুকোজ কমাতে বেশি সাহায্য করবে । সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭২ থেকে ৭৫ । অন্যদিকে চিড়ার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০ থেকে ৫৫ । প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা চালের গ্লাইসেমিক লোড ৫৮ পক্ষান্তরে প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়ার গ্লাইসেমিক লোড ৩৮ ।

তাই সাদা চালের পরিবর্তে খাবার মেনুতে চিড়া রাখলে আপনার ডায়াবেটিস অনেক কম বাড়বে । অর্থাৎ ১০০ গ্রাম চালের ভাত খেলে আমাদের যে ব্লাড গ্লুকোজ বাড়বে, সেই পরিমান ব্লাড গ্লুকোজ বাড়াতে চিড়া খেতে হবে ১৫০ গ্রাম । তাই ডায়াবেটিসের কথা মাথায় রেখে আমরা সাদা চালের ভাত না খেয়ে চিড়া খেতে পারি । সেটা আমাদের ডায়াবেটিস প্যাসেন্টের জন্য বেটার অপশন হবে । তবে সাদা চালের ভাত থেকে চিড়া ভালো হলেও, চিড়াও আমাদের ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করে । তাই এটি আমাদের নিয়ম জেনে খেতে হবে । নিয়ম মেনে চিড়া খেলে সেটি আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজে আসবে ।

চিড়াতে বিদ্যমান গড় পরতা ১১তি খনিজ এবং ভিটামিন । প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়াতে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার ২০% ভিটামিন B2 বিদ্যমান, জিঙ্ক আছে ২৩%, ভিটামিন B6 ২৭%, B5 ৩১%, ফসফরাস ৩১%, ম্যাগনেসিয়াম ৩৫%, সেলেনিয়াম ৪২%, কপার ৪৭%, ভিটামিন B1 ৫৮%, ভিটামিন B3 ৬২%, ম্যাঙ্গানিজ ১৬৩% । চিড়াতে থাকা খনিজ উপাদান গুলো অগ্নাশয়ের বেটা সেল গুলোকে স্বাভাবিক রেখে ইনসুলিন নিঃসরণ সাভাবিক রাখে আবার অন্যদিকে কোষের ইনসুলিন রেজিসটেন্স কমিয়ে ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । ফলে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেতিস দুটোই আমাদের শরীরে ঘেঁষতে পারে না । এ ছাড়াও চিড়াতে থাকা খনিজ ও ভিটামিন গুলি আমাদের ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে । তাই আমরা খাবার মেনুতে সাদা চালের পরিবর্তে চিড়া ব্যবহার করতে পারি । যেটা আমাদের ব্লাড সুগার কমাতে দারুন ভাবে সাহায্য করবে । যারা উচ্চ মূল্যের জন্য ব্রাউন চাল কিনতে পারেন না, তাদের জন্য তুলনামুলক কম দামের চিড়া ব্লাড সুগার কমানোর দারুন একটি বিকল্প হতে পারে ।





No comments

Powered by Blogger.