ডায়াবেটিস এ ভাত খাওয়া যাবে কি?

ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই আমাদের প্রথম চিন্তা আসে – এবার কি ভাত খাওয়া বন্ধ করতে হবে? বিশেষ করে আমরা যারা ভাতপ্রেমী, তাদের কাছে এই প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে দাঁড়ায়। আসলেই কি ডায়াবেটিস রোগীরা ভাত খেতে পারবেন না, নাকি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভাত খাওয়া যায়? আজকের আলোচনতে আমরা জানব, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাত খাওয়ার সঠিক নিয়ম, কোন ভাত তুলনামূলক নিরাপদ এবং কীভাবে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব । তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!"

ডায়াবেটিস কী এবং কেন ভাত নিয়ে এতো প্রশ্ন? 

ডায়াবেটিস মূলত একটি মেটাবলিক রোগ, যেখানে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না বা ইনসুলিনের ঘাটতি হয়। ফলে খাবারের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।

এখন, ভাত বা চাল হলো এক ধরণের স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট। এটি শরীরে প্রবেশ করার পর খুব দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয়। তাই ডাক্তাররা সাধারণত ভাত কম খেতে বলেন।

তবে সব ভাত একরকম নয়।

  • সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) অনেক বেশি। অর্থাৎ এটি খাওয়ার পর রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে যায়।

  • অন্যদিকে লাল চাল, ব্রাউন রাইস, বা আতপ চালের GI তুলনামূলক কম, ফলে এগুলো খেলে শর্করা ধীরে বাড়ে।

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রশ্নটা শুধু "ভাত খাওয়া যাবে কি?" এমন না বরং প্রশ্নটা হচ্ছে "কোন ধরনের ভাত, কতটুকু এবং কীভাবে খাওয়া যাবে?"

১. সাদা চাল (White Rice):
সাদা চালের ভাত সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়, কিন্তু এতে ফাইবার কম। GI প্রায় ৭০ এর উপরে। তাই  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

২. লাল চাল (Red Rice):
লাল চালের ভাত এতে ফাইবার, আয়রন, জিঙ্ক বেশি থাকে। GI কম, তাই রক্তে শর্করা ধীরে বাড়ে।

৩. ব্রাউন রাইস (Brown Rice):
এই চালের বাইরের আবরণ রেখে বানানো হয়। এই চালের ভাত ফাইবার সমৃদ্ধ, GI কম। এটি নিয়মিত পরিমাণমতো খাওয়া যেতে পারে।

৪. আতপ চাল:
এটি সিদ্ধ নয়, তাই পুষ্টি অনেকটাই থাকে। GI তুলনামূলকভাবে কম। এটিও খাওয়া যেতে পারে ।

৫. বাসমতি চাল:
এটি দীর্ঘ দানার চাল, যার GI অনেক সময় মাঝারি থাকে। তবে সাদা বাসমতি চাল খাওয়ার আগে অবশ্যই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাত খাওয়ার সঠিক নিয়ম 

  • প্রতিদিন ১–১.৫ কাপের বেশি ভাত না খাওয়াই ভালো। 

  • বড় প্লেট ভরে খাওয়ার বদলে ছোট প্লেট ব্যবহার করুন।

  • সকালে বা দুপুরে ভাত খাওয়া ভালো, রাতে ভাত এড়িয়ে চলা উত্তম।

  • রাতে ভাত খেলে রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে যায়, ঘুমের সময় ইনসুলিনের কাজ কমে যায়।

  • শুধু ভাত খেলে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়বে।

  • তাই ভাতের সাথে প্রচুর সবজি, সালাদ, ডাল ও মাছ রাখলে হজম ধীরে হবে, ফলে শর্করা হঠাৎ বাড়বে না।

  • ভাতের সাথে ভাজা আলু, ভর্তা বা তেল-মশলা বেশি দেওয়া খাবার কম খাবেন।

  • ভাত রান্না করার সময় অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিলে স্টার্চ কিছুটা কমে যায়।

  • সিদ্ধ ভাত ফ্রিজে রেখে পরে গরম করলে GI কিছুটা কমে যায়। এভাবে আপনি খেতে পারেন ।

 বিকল্প খাবার 

ভাত পুরোপুরি বাদ দিতে হবে না, তবে বিকল্প কার্বোহাইড্রেট ব্যবহার করলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

  • আটা বা গমের রুটি খেতে পারেন এগুলোর ভাতের চেয়ে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফাইবার বেশি।

  • ওটস খেতে পারেন এটি নাশতায় চমৎকার,  হজম হয় ধীরে।

  • কুইনোয়া বা মিলেটস খেতে পারেন : উন্নত দেশগুলোতে এটি জনপ্রিয়, তবে এখন আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে।

  • শাকসবজি খান: আলু বাদে অন্য সব সবজি প্রধান খাবারের অংশ করুন।

একেক জন ডায়াবেটিস রোগীর শরীর একেক রকম । কেউ হয়তো আধা কাপ ভাত খেলেও শর্করা বেড়ে যায়, আবার কেউ এক কাপ খেলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য —

  • নিয়মিত গ্লুকোমিটার দিয়ে খাবারের আগে ও পরে রক্তে শর্করা মাপতে হবে।

  • ভাত খাওয়ার পর ২ ঘণ্টা পর মাপলে বোঝা যাবে কোন ভাত, কতটা খেলে সমস্যা হচ্ছে।

ডাক্তাররা বলেন – ভাত একেবারে নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু সঠিক পরিমাণ, সঠিক ধরন এবং সঠিক সময়ে খেতে হবে।

পরামর্শ

  • দিনে তিনবেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন।

  • ভাত খাওয়ার পর অন্তত ১৫–২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন ।

  • সাদা চালের বদলে ব্রাউন বা লাল চাল চেষ্টা করুন।

  • ভাত খাওয়ার সাথে চিনি, সফট ড্রিংক, মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিন।

  • সপ্তাহে ২–৩ দিন ভাত বাদ দিয়ে শুধু রুটি বা সবজি-প্রধান খাবার খেতে পারেন।

"বন্ধুরা, আমরা আজ জানলাম – ডায়াবেটিস এ ভাত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর হলো – হ্যাঁ, ভাত খাওয়া যাবে, তবে সাদা চাল এড়িয়ে চলা ভালো। পরিমাণ কমাতে হবে, ভাতের সঙ্গে সবজি, মাছ, ডাল রাখতে হবে। আর সবচেয়ে জরুরি হলো – নিয়মিত রক্তে শর্করা মাপা ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা।

মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস কোনো অভিশাপ নয়। সঠিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ভাত খেয়েও সুখী ও সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

আপনি যদি আলোচনাটি উপকারী মনে করেন, তাহলে অবশ্যই লাইক দিতে পারেন এবং বন্ধু -বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে, শেয়ার করতে পারেন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে নতুন কোন বিষয়ে 

নিয়মিত হাটুন সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ 

No comments

Powered by Blogger.