প্রতিদিন ডিম খেলে কী হতে পারে?
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার সবচেয়ে সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাবারের নাম কী? উত্তর একটাই—ডিম। ভাজা, সেদ্ধ, অমলেট কিংবা কারি—যেভাবেই খান না কেন, ডিমের জনপ্রিয়তা অপরিসীম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি প্রতিদিন নিয়মিত ডিম খাওয়া হয়, তবে শরীরে আসলে কী ঘটে? এটা কি সত্যিই আমাদের জন্য উপকারী, নাকি লুকিয়ে আছে কিছু ক্ষতির ঝুঁকি?”
“আজকের আলোচনাতে আমরা জানব—প্রতিদিন ডিম খাওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, স্বাস্থ্য উপকারিতা, সম্ভাব্য ক্ষতি, ডাক্তারদের পরামর্শ এবং শেষ পর্যন্ত সত্যিকারের উত্তর: প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ভালো, নাকি খারাপ?”
ডিম– প্রকৃতির সুষম খাদ্য
ডিমকে অনেকেই বলেন “পারফেক্ট ফুড” সুপার ফুড । কারণ একটি মাঝারি আকারের ডিমে থাকে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, থাকে ক্যালরি , ভিটামিন A, D, E, B12 এ ছাড়াও থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড । ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন D এবং কোলিন, যা মস্তিষ্কের জন্য দারুণ উপকারী। আর সাদা অংশে থাকে হাই-কোয়ালিটি প্রোটিন।
প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে কী হয়?
১ । পেশী মজবুত হয়
ডিমের প্রোটিন শরীরের পেশী গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে। যারা জিম করেন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য প্রতিদিন ডিম খাওয়া বিশেষ উপকারী।
২ । মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে
ডিমের কোলিন নামক উপাদান নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করতে সাহায্য করে, যা স্মৃতি শক্তি বাড়ায় এবং মনোযোগ ধরে রাখে।
৩ । চোখের সুরক্ষা পায়
লুটেইন আর জিয়াজ্যান্থিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডিমে পাওয়া যায়। এগুলো চোখের রেটিনা রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা যেমন ক্যাটারাক্ট বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে বাঁচায়।
৪ । ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সকালে নাস্তার তালিকায় একটি বা দুটি ডিম রাখলে দীর্ঘসময় পেট ভরা থাকে। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৫ । হাড় মজবুত হয়
ডিমে ভিটামিন D ও ক্যালসিয়াম আছে, যা হাড় ও দাঁত শক্ত রাখে।
ডিম নিয়ে আমাদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা
অনেকে বলেন, “প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে, হার্টে সমস্যা হবে।”
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—
✔ একটি ডিমে প্রায় ১৮৬ মি.গ্রা. কোলেস্টেরল থাকে, কিন্তু এটা সরাসরি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না।
✔ ডিমে থাকা “এইচডিএল” বা ভালো কোলেস্টেরল বরং হৃদযন্ত্রের বা হার্টের জন্য উপকারী।
✔ তবে যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল বেশি আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সীমিত পরিমাণে ডিম খাওয়াটাই উত্তম হবে ।
প্রতিদিন ডিম খাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতি
১ । অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ঝুঁকি
যাদের জিনগতভাবে কোলেস্টেরল বেশি হয়, তারা প্রতিদিন ২–৩টা ডিম খেলে ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
২ । অ্যালার্জির সমস্যা
অনেকের ক্ষেত্রে ডিম অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে—চুলকানি, চামড়ায় ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৩ । খাদ্যবাহিত রোগের আশঙ্কা
কাঁচা বা আধাসেদ্ধ ডিম খেলে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।
৪ । কিডনির উপর চাপ
কিডনির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া ঠিক নয়। প্রতিদিন বেশি ডিম খেলে কিডনির কাজের চাপ বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যা বলেন
১ । সাধারণ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে ১–২টা ডিম খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী।
২ । শিশুদের জন্য প্রতিদিন একটি ডিমই যথেষ্ট।
৩ । যারা হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন —তাদের ক্ষেত্রে কতটা ডিম খাওয়া উচিত বা অনুচিত, সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়াই ভালো ।
আসুন জেনে নেই ডিম আমরা কিভাবে খাবো ।
সবসময় ভালোভাবে সেদ্ধ বা রান্না করা ডিম খেতে হবে।
ভাজার সময় বেশি তেল ব্যবহার না করাই ভালো।
সকালের নাস্তার তালিকায় ডিম রাখলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
ডিম খাওয়ার সময় শাকসবজি বা হোলগ্রেইন জাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে এটি আরও স্বাস্থ্যকর হয়।
ডিমকে বলা হয় “চিকেন মিট ইন এ শেল”। মানে একটি ডিম হলো সম্পূর্ণ প্যাকেজ। ডিমে থাকে এক কাপ দুধের সমান ক্যালসিয়াম, এক টুকরো মাছের সমান প্রোটিন, আবার ডিম হচ্ছে ভিটামিনে ভরপুর—সব মিলিয়ে ডিমের বিকল্প খুবই কম। মোট কথা ডিমের বিকল্প নেই বললেই চলে ।
তাহলে উত্তর একেবারেই পরিষ্কার। প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া অধিকাংশ মানুষের জন্য উপকারী। এটি শরীরকে দেয় শক্তি, মস্তিষ্ককে করে সতেজ, চোখকে রাখে সুস্থ আর হাড়কে করে মজবুত। তবে হ্যাঁ—অতিরিক্ত খাওয়ার দরকার নেই। সবকিছুর মতোই ভারসাম্য এখানে মূল চাবিকাঠি।”
তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে নতুন কোন বিষয়ে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment