মাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করবেন
সাধারণ ছোট্ট একটি দানার মতো দেখতে চিয়া সিড—কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে আছে অসাধারণ পুষ্টি আর অবাক করা স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত খেলে শরীরে এমন সব পরিবর্তন আসে যা অনেকের কল্পনারও বাইরে। মাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে আপনার শরীর, ত্বক, এমনকি এনার্জি লেভেলেও দেখা দিতে পারে চোখে পড়ার মতো পার্থক্য। আজকের আলোচনাতে আমরা জানবো, এই ক্ষুদ্র বীজ কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যকে বদলে দিতে পারে। তো চলুন শুরু করা যাক ।
১. বয়সের ছাপ পড়া ধীর করবে
চিয়া সিড ‘অ্যান্টি–এজিং’ খাবার হিসেবে বেশ পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল শরীরের ডিএনএ ও জীবিত কোষের ক্ষতি করে, ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত দেখা দেয়। ধূমপান, দূষণ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, ভাজাপোড়া, অ্যালকোহল, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও দুশ্চিন্তার ফলে ফ্রি র্যাডিক্যাল বাড়ে। এর কারণে ক্যানসার, হৃদ্রোগ, প্রদাহ, চোখে ছানি ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে। মাত্র সাত দিন চিয়া সিড খেলে ত্বকে এর ইতিবাচক প্রভাব অনুভব করবেন।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করবে
চিয়া সিড খাওয়ার আগে ওজন মাপুন, এক সপ্তাহ পর আবার দেখুন। যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ওজন কমবে। মাত্র ২ চা–চামচ চিয়া সিডে দিনের প্রয়োজনীয় ফাইবারের প্রায় অর্ধেক থাকে। সকালে নাশতায় খেলে ৩–৪ ঘণ্টা পেট ভরা থাকবে। এছাড়া ১ চা–চামচ চিয়া সিড এক ঘণ্টা ভিজিয়ে নিয়ে ১ গ্লাস পানিতে ১ চা–চামচ লেবুর রস ও ১ চা–চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেলেও মেদ পোড়াতে সহায়ক হবে ।
৩. হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষা দেবে
চিয়া সিডে আছে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, ক্যাফিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও দুই ধরনের খাদ্য আঁশ। কোয়েরসেটিন হার্টের জন্য উপকারী। ফাইবার ও ওমেগা–৩ কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৪. হাড়কে মজবুত করবে
চিয়া সিড ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ একটি বীজ । মাত্র ১ আউন্স চিয়া সিডে থাকে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসও হাড়ের স্বাস্থ্যে কার্যকর। এছাড়া পেশী ও স্নায়ুর জন্যও এটি অত্যন্ত উপকারী।
৫. রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধ করবে
সকালে কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টি খেলে দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ মিশে যায়, ফলে ‘সুগার স্পাইক’ হয়। চিয়া সিড এই প্রক্রিয়া ধীর করে, ফলে টাইপ–টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা উপকারে আসে ।
আমরা চিয়া সিডের উপকারিতা জানলাম ।
কিন্তু এই চিয়া সিড কখন, কীভাবে ও কতটা খাবেন?
১. প্রতিদিন সকাল, সন্ধ্যায় খেতে পারেন অথবা দুই বেলার মাঝে খেতে পারেন।
২. বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে । তবে প্রতিদিন অন্তত ২ চা–চামচ (১০ গ্রাম) খেলেই কাঙ্খিত উপকার মিলবে।
৩. সকালে খালি পেটে পানিতে গুলিয়ে সাথে সাথে খেতে পারেন , সারা রাত ভিজিয়ে সকালে খেতে পারেন অথবা সকালে এক ঘণ্টা আগে ভিজিয়েও খেতে পারেন। এ ছাড়াও স্মুদি, ফলের রস, ওটস, সিরিয়াল বা সালাদের সঙ্গেও মিশিয়েও আপনি খেতে পারেন ।
আপনি হয়তো ভাবছেন—এত ছোট্ট একটি বীজে এত শক্তি কোথা থেকে আসে! নিয়মিত খাদ্যতালিকায় চিয়া সিড যোগ করলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে, ত্বক উজ্জ্বল হবে, আর স্বাস্থ্য থাকবে অনেক বেশি সুরক্ষিত । তবে মনে রাখবেন, কোনো খাবারই জাদুর মতো কাজ করে না—ভালো ফল পেতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে এটি খেতে হবে । আজ থেকেই শুরু করুন চিয়া সিডের এই স্বাস্থ্যকর যাত্রা, আর নিজেই অনুভব করুন আপনার শরীরের ইতিবাচক পরিবর্তন।
আপনার যা আছে তাতেই খুশি থাকুন । নিজেকে হাসি খুসি রাখুন । তো আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরের কোন এপিসোডে নতুন কোন বিষয়ে । আল্লাহ হাফেজ ।
Post a Comment